নিউইয়র্কে ভিন্নধর্মী আয়োজনে ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার হয়ে গেলো গজল নাইট। উডসাউডের গুলশান টেরেসে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হয় এই আসর, যা চলে রাত ১টা পর্যন্ত। মনোমুগ্ধকর এ অনুষ্ঠানে দুই ডজন গজল পরিবেশন নিউইয়র্কের অতি পরিচিত তিন কন্ঠশিল্পী চন্দন চৌধুরী, লিমন চৌধুরী এবং ত্রিণিয়া হাসান। আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রায় ৫ ঘণ্টাব্যাপী এই গজল সন্ধ্যার উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে দরবারি ঘরানার মঞ্চ ও আলোকসজ্জা সকলের নজর কাড়ে। আমন্ত্রিত অতিথি দর্শকদের বলতে শোনা যায় নিউইয়র্কে অনুষ্ঠানে আয়োজনে এমন বৈচিত্র তারা খুব কমই দেখছেন। নিউইয়র্ক : অনুষ্ঠানে অতিথি ও আয়োজকবৃন্দ। এতে যেসব শিল্পীরা গজল পরিবেশন করেন, নিউইয়র্কে বাংলা সংস্কৃতি অঙ্গনে সবাই তাদের চেনেন। তাদের গান আগেও শুনেছেন। কিন্তু গজল সন্ধ্যার আয়োজনে এমন একটি আবহ সৃষ্টি করা হয়, যেন চেনা শিল্পীদের নতুন করে চেনা ও জানার সুযোগ পেয়েছেন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত শ্রোতা- দর্শকরা। শারমিনা সিরাজ সোনিয়ার প্রাণবন্ত উপস্থাপনা ও লিমন চৌধুরীর পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় গজল সন্ধ্যা। তিন শিল্পী ছয়টি করে একক ও দুটি করে দ্বৈত গজল পরিবেশন করেন। নিউইয়র্ক : গজল সন্ধ্যায় পরিবেশন করছেন চন্দন চৌধুরী, তৃণিয়া হাসান ও লেমন চৌধুরী। তাদের কণ্ঠে উঠে আসে জগজিৎ সিং, চিত্রা সিং, অনুরাধা পাড়োয়াল, আশা ভোসলে, মেহেদী হাসান, গুলামআলীসহ ভারত-পাকিস্তানের প্রখ্যাত গজল শিল্পীদের জনপ্রিয় সব গজল। আমন্ত্রিত অতিথিদের সবাই এ আয়োজনের প্রসংশা করেন। অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পরে সেখানে উপস্থিত হন বাংলাদেশের প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ও নজরুল গবেষক ফেরদৌস আরা এবং জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী রিজিয়া পারভীন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত তারা উপস্থিত ছিলেন। এ আয়োজন সম্পর্কে তাদের অনুভুতি প্রকাশ করে ফেরদৌস আরা বলেন, ‘বাঙালির হৃদয়ে এতো ঐশ্বর্য ছিলো তা আমি জানতাম না। এটা অনন্য, অসাধারণ। বাঙালির ইচ্ছে থাকে কিন্তু সাধ্য থাকে না। আবার সাধ্য থাকলেও অনেক সময় চিন্তাশক্তি ও রুচিশীলতার অভাব থাকে। কিন্তু এই আয়োজনে দুটো জিনিসের খুব চমৎকার সমন্বয় ঘটেছে। রিজিয়া পারভীন বলেন, এই তিন শিল্পীকে আমি শুধু শিল্পী হিসাবে নয়, মানুষ হিসাবেও চিনি। ওরা ভালো মানুষ ও ভালো শিল্পী। আর এই আয়োজন এক কথায় অসাধারণ, চমৎকার। এই চমৎকার আয়োজনের জন্য আমি আবু জাফর মাহমুদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। অনুষ্ঠান আয়োজন ও পৃষ্ঠপোষক বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের চেয়ারম্যান আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে যা কিছু শিখেছি এর মধ্যে যা কিছু সুন্দর ও শক্তিশালী, যা কিছু আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় ও গৌরভের তা আমরা মনে রাখবো, আমাদের পাশে নেবো আমাদের চিন্তার উত্তরণের জন্যে। এবং এটাই আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের পথ রচনায়, পথ অতিক্রমে আমাদেরকে সহযোগিতা দেবে এবং যথার্থ উপাদান হিসেবে কাজ করবে আমাদের মন ও মননে। তিনি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে একটি দেশে বসবাস করছি, আমরা অনেকেই এদেশের নাগরিক হয়েছি। কিন্তু আমাদের নিজস্ব, পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতীয় একটি কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। যা আমাদের সত্তা থেকে কখনো আলাদা করে দেয়ার যেমনি সুযোগ নেই, তেমনি আমাদের এ প্রজন্মের সন্তানরা যারা এখানে বেড়ে উঠছে তাদেরকেও এর সঙ্গে পরিচিত করে তোলার গুরু দায়িত্ব আমাদের ওপরই অর্পিত। এই দায়িত্ব থেকেই আসলে এই গজল সন্ধ্যার আয়োজন। আর এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো এখানে যেসব শিল্পী শুধুমাত্র হৃদয়ের টানে শিল্প ও সঙ্গীত চর্চাকে টিকিকে রাখার চেষ্টা করছেন তাদের সহযোগিতা করা। এই প্রচেষ্টা আমি অব্যাহত রাখবো। গজল সন্ধ্যা এই উদ্যেগেরই একটি সূচনা। দুই শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথি মধ্যরাত পর্যন্ত শিল্পীদের অনবদ্য এসব পরিবেশনা উপভোগ করেন। এদের মধ্যে ছিলেন নিউইয়র্কের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক, সঙ্গীত শিল্পী, ব্যবসায়ী, মূলধারার রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিসেবী, অনুষ্ঠান আয়োজক ছাড়াও নানা শ্রেনী পেশার প্রবাসী বাংলাদেশি।