যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চট্টলাবাসীর সামাজিক সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতি অব নর্থ আমেরিকার অফিস ভবনের তালা ভাঙার ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।। চট্টগ্রাম সমিতি অব নর্থ আমেরিকার কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন পরবর্তী কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে এক দিকে মামলা, অপরদিকে সমিতি ভবনের তালা ভেঙ্গে অফিস দখল পাল্টা দখলের ঘটনা ঘটে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সমিতি ভবনের তালা ভাঙ্গার অভিযোগে নিউইয়র্ক প্রবাসী আহসান হবিবকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ী চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায়। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম সমিতি অব নর্থ আমেরিকার দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন গত ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ‘তাহের-আরিফ’ ও ‘মাকসুদ-মাসুদ’ নামের দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতাতা করে। নির্বাচন শেষে সভাপতি পদের দুই প্রার্থী ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের আবু তাহের ও ‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের মাকসুদুল হক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান সামান্য থাকায় জটিলা দেখা দেয়। পরবর্তী নির্বাচনী ফলাফল সৃষ্ট জটিলতার পর নির্বাচন কমিশন পুনরায় ভোট গণনা ও ভোট গণনার কাজে সহযোগি প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট পাওয়ার পর সভাপতি পদে ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী আবু তাহেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামকে এবং দুই প্যানেল থেকে নির্বাচতদের বিজয়ী ঘোষণা করেন। নির্বাচন কমিশনের ফলাফল মেনে না নিয়ে ‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের পক্ষ থেকে আইনের আশ্রয় নেয়া হয় এবং নিজেদের নির্বাচত বলে দাবী করেন। তাদের মামলাটি বর্তমান চলমান রয়েছে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা মোতাবেক ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের বিজয়ীরা নিজেদের নির্বাচত বলে ঘোষণা দিয়ে অভিষিক্ত হয় এবং কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।
উদ্ভুত পরিস্থিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কে বা কারা ব্রুকলীনস্থ সমিতি ভবনের তালা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে। এই ঘটনার পর আবু তাহের ও মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম স্থানীয় পুলিশ প্রিসেঙ্কট ও এটর্নীর সাথে পরামর্শ করে পুলিশে রিপোর্ট করেন। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ সমিতি ভবনের দরজার তালা ভাঙার ভিডিও দেখে আহসান হবিব নামে একজনকে সনাক্ত ও গ্রেফতার করে।
এ ব্যাপারে আবু তাহের জানান, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য নিয়ে আমরা নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচন কমিশন আমাদের সাটিফাইড করেছে। তাই, আমরা নির্বাচিত কমিটি হিসেবে সমিতির স্বার্থে যা যা করা দরকার তাই করছি। কিন্তু কে বা কারা সমিতি ভবনের তালা ভেঙ্গে অফিস দখলের উদ্যোগ নেয়া আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হই।
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচিত কমিটি বলেই সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই, সমিতিকে আরো শক্তিশালী করতে চাই। আমরা আশা করব, সমিতির সব সদস্য ছাড়াও সংশ্লিস্টরা নির্বাচিত কমিটিকে সার্বিক সহযোগিতা করবেন।’
এ ব্যাপারে মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম সমিতির নির্বাচিত কর্মকর্তা। আমরা নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচিত ঘোষিত হওয়ার পর অভিষিক্ত হয়েছি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আমরা সমিতি ভবনে ইফতার পার্টি করেছি। কিন্ত সমিতি ভবনের তালা ভাঙ্গা অপরাধ। যে কারণে আমরা পুলিশে রিপোর্ট করেছি। আমরা জনিনা কে বা কারা তালা ভেঙেছে তাই রিপোর্টে কারো নাম না থাকায় পুলিশ ঐ দিনের ভিডিও দেখে আহসান হাবিব নামের একজনকে সনাক্ত করেছে এবং আরো কয়েকজনকে খুঁজছে। এছাড়াও কে বা কারা সমিতি ভবনের ভিডিও রেকর্ড ও ইন্টার লাইনও কেটে ফেলে।’
এ ব্যাপারে মাকদুল হক চৌধুরীর সাথে যোগাযেগ করা হলে তিনি নিজেকে চট্টগ্রাম সমিতি নির্বাচিত সভাপতি দাবী করে বলেন, ‘ঘটানার সময় আমি ছিলাম না। তবে গত ১৯ ফেব্রুয়ারী আমরা তালা ভেঙ্গে সভা করেছি এই কথা ঠিক নয়। সেদিন আমাদের প্যানেলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তালা খোলার লোক ডেকে এনে তা খুলে এবং সেখানে কার্যকরী কমিটির সভা হয়। আর এখন বলা হচ্ছে, আমরা নাকি তালা ভেঙেছি, ভিডিও রেকর্ড আর ইন্টার লাইন নষ্ট করেছি। এসব কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।’
মাকদুল হক চৌধুরী আরো বলেন, ‘ঘটনার ১৮ দিন পর প্রতিপক্ষরা যা-তা বলে পুলিশে অভিযোগ করেছে। পুলিশ গত ১৮ মার্চ ভোর ৫টার দিকে আহসান হাবিবকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে। আমার বাসাতেও পুলিশ আসে। যা নিন্দনীয়। পুলিশ এমনভাবে আমার বাসায় আসে যাতে আমার শিশু সন্তানসহ পরিবরের লোক ভয় পেয়ে যায় এবং এখনো তারা ট্রমায় ভুগছেন বলে তাদেরকে অন্যত্র নিরাপদে রাখতে বাধ্য হয়েছি। আমরা আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করব।’