বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনের রূপকার শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন আয়োজিত “Shaheed Captain Sheikh Kamal: Remembering a Valiant Freedom Fighter and a Youth Icon” শীর্ষক এক স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শেখ কামালের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম অনুসরণ করে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মকে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে শান্তি ও সহণশীলতার শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান।
স্পীকার বলেন, “বাংলাদেশের ছাত্র ও যুব সমাজের কাছে এক অসাধারণ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব শেখ কামাল খেলার মাঠ থেকে নাটকের মঞ্চ, সংগীত জগত এবং সদ্য-স্বাধীন দেশে তরুণদের সুসংগঠিত করতে যে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন তা বিশ্বের যেকোনো দেশের তরুণ সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করবে।”
শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের নামে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন প্রবর্তিত পুরস্কারকে একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করে স্পীকার বলেন, “এই পুরস্কার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মকে শেখ কামালের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে ও অনুপ্রাণিত হতে আরো উৎসাহিত করবে।”
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমের সভাপতিত্বে শুক্রবার বাঙ্গালি অধ্যূসিত পূর্ব-লন্ডনে আয়োজিত এই স্মারক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম, এমপি, বলেন, “বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সদ্য-স্বাধীন দেশের পুন:গঠনে তরুণ সমাজকে সুসংগঠিত করে ক্যাপ্টেন শেখ কামাল যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন সেজন্য তিনি চির অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবেন।”
শ.ম রেজাউল করিম আরো বলেন, “বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও তাঁর ঘনিষ্ট অনুসারীদের সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতেই ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫-এর কালরাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধিরা ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড সংঘটিত করে। এরপর তারা দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। বর্তমানেও এধরণের অপপ্রচার আবার নতুন করে শুরু হয়েছে।” তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে এধরণের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বিশেষ করে যুক্তরাজ্য প্রবাসি বাংলাদেশিদের সুদৃঢ় অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, “অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছিলেন একজন ট্রেন্ড সেটার, ভিসনারি ও আইকন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শক্ত ভিত্তির ওপরই আজ বাংলাদেশ বিশেষ করে বিশ্ব-ক্রীড়াঙ্গনেও গৌরবোজ্জ্বল অবস্থান অর্জন করেছে।”
যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ হাসান এমবিই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তাঁরা বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও সামাজিক কর্মকান্ডে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো হাই কমিশনারের সঞ্চালনায় ‘Remembering Shahid Captain Sheikh Kamal: Role of youth & sports in promoting peace, tolerance and nation-building’ বিষয়ে এক প্রাণবন্ত প্যানেল আলোচনা। এতে শেখ কামালের সহপাঠী ও ঘনিষ্ট বন্ধু এবং জাতীয় অলিম্পিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাম্বাসেডর সৈয়দ শাহেদ রেজা ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির সিনিয়র ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকসহ বাংলাদেশি ক্রীড়া ও সংস্কৃতি অনুরাগী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ মিরাজ সাদাত ও ব্রিটিশ-ইউক্রেনিয়ান তরুণ আলবার্ট এডওয়ার্ড সালিমোভ অংশগ্রহণ করেন।
অ্যাম্বাসেডর সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, “বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ কামালও ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও যুব নেতৃত্বের ক্ষেত্রে একজন সার্বজনীন নেতা ছিলেন। তিনি শুধু নিজের আবাহনী ক্রীড়াচক্রের জন্যই নয়, অন্যান্য ক্লাব ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেও সবসময় সক্রিয় ছিলেন।”