ইউনাইডেট হিন্দুস অব ইউএসএ ইনক এর নব গঠিত কমিটির (দুই বছর মেয়াদী) অভিষেক অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হয়েছে। শ্রী সুশীল সিনহা আহবায়ক, শ্রী উত্তম কুমার সাহা সদস্য সচিব সহ মোট ১২ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি সকলের সহযোগিতায় প্রায় ১৫ দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। শ্রী ভজন সরকার (সভাপতি), শ্রী রামদাস ঘরামী (সাধারণ সম্পাদক) সহ ৭০ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী পরিষদ, স্বামী দেবপ্রিয়ানন্দ গিরি মহারাজ (চিফ বোর্ড অব এডভাইজার) সহ মোট ৯০ সদস্য বিশিষ্ট এডভাইজার কমিটি, ডা. প্রভাত দাস চেয়ারম্যান, শ্রী সুশীল সিনহা মেম্বার অফ সেক্রেটারি করে মোট ১০২ সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড অব ডাইরেক্টর কমিটি ও শ্রী নিত্যানন্দ কিশোর দাস (চিফ বোর্ড অব ট্রাস্টি) গঠন করা হয়।

গত ১০ ডিসেম্বর, রোববার বিকেল ৪টায় সিটির গুলশান ট্যারেসে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় সর্বস্তরের ৪০০ মানুষ অংশ নেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শ্রী নিত্যানন্দ কিশোর দাস, স্বামী দেবপ্রিয়ানন্দ গিরি মহারাজ ও ভবতোষ মিত্রের নেতৃর্ত্বে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের চরণে প্রণাম নিবেদন করে শ্রীমত ভগবৎ গীতা পাঠ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সুচনা করা হয়। এছাড়াও ১৬ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশের বিজয়ের মাস উপলক্ষ্যে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

সংগঠনের সহসভাপতি ও নির্বাচন কমিশন অজিত চন্দ ও আশিস ভৌমিক নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের ভগবান শ্রী কৃষ্ণের চরণে প্রণাম রেখে শপথ বাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে অভিষেক উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক শ্রী সুশীল সিনহা, সদস্য সচিব উত্তম কুমার সাহা আলোচনার শুরুতে তাদের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। সুশীল সিনহা তার বক্তব্যে বলেন, আজকের এই আয়োজনের সফলতা আপনাদের ভুলত্রুটি যা হয়েছে ও সকল ব্যর্থতা আমার কাঁধে নিয়ে আপনাদের সাথে থেকে বাংলাদেশের সনাতনী হিন্দুদের অধিকার আদায়ের জন্য যা কিছু করণীয় আমার সাধ্যমত আমি করার চেষ্টা করবো।

উত্তম সাহা বলেন, প্রবাসে থেকে আজ আমাদের মাতৃর্ভূমিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার্থে তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যা দুঃখজনক। ২০২১ সালে আমাদের বাংলাদেশের মন্দির, মন্ডপ, বিগ্রহ ভেঙ্গে চুড়মার করা হয়েছে। বিভিষিকাময় মানবেতর জীবন যাপন করেছে আমাদের দেশের সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। যা আমরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারি না। বাংলাদেশের সনাতনী হিন্দুদের অধিকার আদায়ের এবং জীবনের নিরাপত্তার জন্য এই সংগঠনের জন্ম হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেতে চাই। বাংলাদেশ সরকার তার কমিটমেন্ট রক্ষা করুন। না হলে সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন আরো বেগোবান হবে।

রামদাস ঘরামি তার বক্তব্যে বলেন, দেশের ও প্রবাসের হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমাল রক্ষার্থে সকলের সহযোগিতা নিয়ে আমরা কাজ করে যাবো। তিনি বলেন, আমাদের একটি নিজস্ব ফিউনারেল হোম থাকা খুব প্রয়োজন। র সকলের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে অতি শীঘ্রই আমরা একটি ফিউনারেল হোম তৈরী করতে চাই।

শ্রী ভজন সরকার বলেন, ভবিষ্যতে সকলের সার্বিক সহযোগিতায় আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে আমাদের ধর্মীয় রিতিনিতি রক্ষা করে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেদের জীবনের নিরাপত্তা ও সম্পত্তি রক্ষার্থে যা যা করণীয় আমরা আপনাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের যে কোন মন্ত্রণালয়ে এবং প্রয়োজনে সরকারের সাথে আলোচনা করে আমাদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করে যাবো।

এছাড়াও সংগঠনের চেয়ারম্যান ডা. প্রভাত দাস, উপদেষ্টা শিতাংশু গুহ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এর সভাপতি ও সংগঠনের উপদেষ্টা নবেন্দ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক ও কলম্বিয়া ইউনির্ভার্সিটির প্রফেসর এবং সংগঠনের উপদেষ্টা যথাক্রমে ডক্টর দ্বিজেন ভট্টাচার্য, রূপ ভৌমিক, ডক্টর জিতেন রয়, ডক্টর দিলীপ নাথ ও বিষ্ণু গোপ, দেবাশীষ পাল, বিশিষ্ট শিল্পপতি উপদেষ্টা চন্দন সেন গুপ্ত, উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার রন্জিত রায়, কৃস রুদ্র , অশোক ব্রহ্মচারী, সুকান্ত দাস টুটুল, সুশীল সাহা, রন্জিত সাহা, মনিকা রায় চৌধুরী, অরবিন্দ কিশোর দাস,প্রদীপ মালাকার, নতুন কমিটির শ্রী ভবতোষ মিত্র, নিতাই নাথ, সবিতা দাস, জয়দেব গাইন, প্রনব রায় রুনু, সন্জিত ঘোষ, পরেশ ধর, জলি সাহা, সুমিতা বিশ্বাস, সুবর্না সেনগুপ্ত, কেশব চক্রবর্তী, প্রিতিস বালা, তাপস সাহা, চম্পা নন্দী সরকার, সমীর সরকার, হিমেন রায়, সুমন দাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের হিন্দুরা আজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সরকারের ইন্দনে সঠিক বিচার না পেয়ে কারা ভোগ এবং আদালতে মামলা চালাতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছে। হিন্দু নির্যাতন এতো ঘৃন্য পর্যায়ে পৌছুছে যে, ১৯৭১ সালে হিন্দুর সংখ্যা ১৯% হতে আজ ৭.৯% এ এসে ঠেকেছে, মৌলবাদী সন্ত্রাসী ছাড়াও পরোক্ষ ভাবে সরকারী মদদে হিন্দুদের জমি দখল হচ্ছে। ১৫ বছর দেশ পরিচালনা করেও ২০১৮ সালে নির্বাচন ইসতেহারে সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা বিল পাশ কিংবা সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। পরে সাংস্কৃতিক সন্ধ্য ও নৈশ ভোজের আহ্বান জানিয়ে উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সুতিপা চৌধুরী সম্পা।