NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, শুক্রবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৫ | ১২ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
পুলিশের সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে ইতালি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জনগণমুখী সংসদের জন্য ই-পার্লামেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : আইন উপদেষ্টা প্রবাসীদের সহযোগিতায় দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে : ড. ইউনূস শান্তি আলোচনা বাধাগ্রস্ত, জেলেনস্কিকে দায়ী করছেন ট্রাম্প কাশ্মীরে হামলা মোদী সরকারের পাশে দাঁড়ালো বিরোধীদলগুলো বিদেশের ৪০ শহরে মুক্তি পাচ্ছে ‘জংলি’ কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন চায় অস্ট্রেলিয়া: হাইকমিশনার একসঙ্গে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেবে পাকিস্তান
Logo
logo

দক্ষিণ কোরিয়া-জার্মানির অভিন্ন ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব


খবর   প্রকাশিত:  ১১ নভেম্বর, ২০২৪, ০৪:২৪ এএম

দক্ষিণ কোরিয়া-জার্মানির অভিন্ন ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানি—দুই দেশেরই বেশ ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে চীনের সঙ্গে। দুই দেশই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা এ দুই দেশের জন্যই চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব আট হাজার কিলোমিটারের বেশি হলেও তাদের রয়েছে অভিন্ন মূল্যবোধ। পাশাপাশি দুই দেশেরই রয়েছে ভাঙনের অভিজ্ঞতা।

১৯৪৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী শক্তি জার্মানিকে পূর্ব-পশ্চিমে বিভক্ত করে। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সালের কোরিয়ান যুদ্ধের ফলে কোরীয় উপদ্বীপও উত্তর এবং দক্ষিণে বিভক্ত হয়। পরবর্তী দশকগুলোতে পশ্চিম জার্মানি এবং দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনীতির দ্রুত সম্প্রসারণ এবং গণতন্ত্রীকরণের প্রক্রিয়ার দিকে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্থিতাবস্থাও দেশ দুটির দ্রুত উন্নতিতে ভূমিকা রাখে।

১৯৮৯ সালে গণতান্ত্রিক পশ্চিম এবং কমিউনিস্ট পূর্বের মধ্যে বিভাজনের প্রতীক বার্লিন প্রাচীরের পতন হয়। ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর জার্মানির পুনর্মিলনের পথ প্রশস্ত করে। কোরীয় উপদ্বীপ অবশ্য এখনো বিভক্তই রয়ে গেছে।

১৪০ বছরের বন্ধুত্বের উদযাপন
বার্লিন এবং সিউল এ বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের ১৪০ বছর উদযাপন করছে। পাশাপাশি জার্মানিতে হাজার হাজার কোরিয়ান খনি শ্রমিক এবং নার্সদের অস্থায়ী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা একটি নিয়োগ চুক্তির ৬০তম বার্ষিকীও হচ্ছে ২০২৩ সালে।

জার্মানিতে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত কিম হং কিউন বলেছেন, ‘এই অভিন্ন ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোরিয়া এবং জার্মানি রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং জনগণের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ক্ষেত্রে পরস্পরকে আরো সহযোগিতা করবে।’

জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, জার্মানি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং দুই দেশের অভিন্ন ইতিহাসকে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া জার্মানির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমমনা কণ্ঠস্বর।’

চীনের ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে উদ্বেগ
দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ প্রাধান্য পেলেও দিন দিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিবেচনাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দুই পক্ষই জরুরি অবকাঠামো, সরবরাহে বৈচিত্র্য আনা, সাইবার নিরাপত্তা এবং জ্বালানি নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়ের ওপর তাদের মনোযোগ বাড়াচ্ছে।

মার্চে জার্মানির অভ্যন্তরীণ ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার ইউনিট ‘কিমসুকির’ আক্রমণ নিয়ে সতর্কতা জারি করে একটি যৌথ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়গুলোর গুরুত্ব বাড়ার পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং এর আরো আগ্রাসী বৈদেশিক নীতি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চীনের বাজারে জার্মানি নিজের উৎপাদনের প্রায় ৮ শতাংশ রপ্তানি করে। দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে এই হার আরো বড়। দেশটির পুরো রপ্তানি পণ্যের এক-চতুর্থাংশই চীনের বাজারে যায়।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার প্রভাব
বড় বাণিজ্য অংশীদারদের একটি হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জার্মানির ওপর চীনের বড় ধরনের অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালে সিউল উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি থার্ড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করতে সম্মত হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু এই পদক্ষেপটির কারণে চীন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। দেশটির উদ্বেগ ছিল, থার্ড সিস্টেমের শক্তিশালী রাডার চীনের সামরিক কার্যকলাপের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করার কাজে ব্যবহার করা হতে পারে।

এর প্রতিক্রিয়ায় চীন যে পাল্টা ব্যবস্থা নেয় তাতে দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কয়েকটি সংস্থার জন্য দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি বয়ে আনে। বিশেষ করে কয়েক দশকের চেষ্টায় চীনের বাজারে কৌশলগত অবস্থান তৈরি করা লোটে গ্রুপের অবস্থান মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায়। এ ঘটনার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নিরাপত্তা নির্ভরতা এবং চীনের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জার্মানি।

সূত্র : ডয়চে ভেলে