NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, শনিবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

যুক্তরাষ্ট্র ওপেন আইস’ পালন করলো শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯৫ তম জন্মদিন


খবর   প্রকাশিত:  ০২ জানুয়ারী, ২০২৪, ১২:৪১ পিএম

যুক্তরাষ্ট্র ওপেন আইস’ পালন করলো শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯৫ তম জন্মদিন

নিউইয়র্ক: একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ‘সতত তোমারি কথা ভাবি এ বিরলে’ শীর্ষক ৯৫ তম জন্মদিন পালন করলো ‘যুক্তরাষ্ট্র ওপেন আইস’।
গত ৩ মে সন্ধ্যে সাতটায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানটি সমবেত ভাবে গেয়ে জন্মদিনের শুভ সূচনা করা হয়। এরপর তার সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ, ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি এবং আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের অন্যতম সদস্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্য মুজাহিদ আনসারী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের আর এক সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা জাকির হোসেন বাচ্চু। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের কনিষ্ঠ সন্তান সাইফ ইমাম জামি অনুষ্ঠানে ভিডিও‘র মাধ্যমে তার মায়ের স্মৃতি চারণ করেন।
শহীদ জননীর স্মৃতিচারণ ও আলোচনায় অংশ নেন প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, সাপ্তাহিক ঠিকানা প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান, প্রগ্রেসিভ ফোরামের প্রাক্তন সভাপতি খোরশেদুল ইসলাম,ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম সংগঠক সাগর লোহানী,যুক্তরাষ্ট্র উদীচীর সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার এসোনিয়েশনের নেতা শেখ আকতারুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারী বকুল, শহীদ সিরাজউদ্দিনের সন্ধান তৈহিদ রেজা নুর, গবেষক ওবায়দুল্লাহ মামুন,সাবেক ছাত্র নেতা আলী হাসান কিবরিয়া অনু, খোরশেদ আলম.যুক্তরাষ্ট্র মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুলেখা পাল প্রমূখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী সনজীবন কুমার।

 

কবিতা আবৃত্তি করেন সংস্কৃতিজন ও বাচিক শিল্পী গোপন সাহা। জাহানারা ইমামকে নিয়ে লেখা স্বরচিত ছড়া পাঠ করেন ছড়াকার মনজুর কাদের ও লেখক-সাংবাদিক দর্পন কবীর।
জাহানারা ইমামের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন নাট্যকর্মী দীলিপ মোদক এবং তার লেখা শেষ চিঠি পাঠ করে শোনান সাবেক ছাত্র নেতা শফিউল আজম। ব্যবস্থাপনায় ছিলেন হিরো চৌধুরী। অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন সাংবাদিক তোফাজ্জল লিটন।
সংগীত পরিবেশন করেন রেজা রহমান,দুলাল,মুক্তি সরকার ও তুহিন মাহফুজ।
জাহানারা ইমামকে স্মরণ করতে গিয়ে বক্তারা বলেন,নতুন প্রজন্মকে জাহানারা ইমামই সংগ্রাম করার সাহস যুগিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের শত্রু-মিত্র চিনতে শিখেয়েছে।
বক্তরা বলেন,যে রাষ্ট্র জাহানারা ইমামকে রাষ্ট্রদ্রোহী করে, সেই রাষ্ট্র আমাদের কাম্য ছিল না। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে মানুষ হয়ে থাকি তা হলে এই রাষ্ট্রের আমূল পরিবর্তন করা দরকার। সেই আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গেলেই জাহানারা ইমামের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন জাহানারা ইমামের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলে সভায় বক্তরা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য,একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থের প্রণেতা জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধে পুত্র রুমী ও স্বামীকে হারান। রুমীর শহীদ হওয়ার সূত্র ধরেই তিনি ‘শহীদ জননী’র মযার্দায় ভূষিত হন।
১৯৯১ সালে পাকিস্তানের নাগরিক ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী দলের আমীর ঘোষণা করা হলে দেশে গণবিক্ষোভের জন্ম হয়। এর ফলে জাহানারা ইমাম নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয়। তাছাড়া তার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন,প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট,শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়। এই কমিটি ‘গণআদালত’-এর মাধ্যমে গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদন্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। ১৯৯৩ সালে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণতদন্ত কমিটি ঘোষণা করে আরো আটজন যুদ্ধাপরাধী আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী, মো. কামরুজ্জামান, আবদুল আলীম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মওলানা আবদুল মান্নান, আনোয়ার জাহিদ এবং আব্দুল কাদের মোল্লার নাম ঘোষণা করা হয়।
জাহানারা ইমাম ১৯২৯ সালের ৩ মে মুর্শিদাবাদ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৬ জুন আমেরিকার মিশিগানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার জীবনাবসান হলেও ঢাকায় তাকে সমাহিত করা হয়।