খবর প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৪:৪৩ এএম
রাজধানীর বঙ্গবাজারের পোড়া কাপড় দিয়ে তৈরি অলংকারের ছবিসহ ‘মজিদ চাচা’ ও গরুর ছবি নিয়ে সমালোচনার ঝড় চলছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে নিয়ে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়েও কেউ কেউ অভিযোগ কিংবা সমালোচনা করছেন।
এসব সমালোচনা নিয়ে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস নিজের বক্তব্য দিয়েছেন।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের লাইভে এসে বিদ্যানন্দের বিরুদ্ধে ওঠা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন কিশোর কুমার দাস।
কিশোর কুমার দাস বলেন, বিদ্যানন্দের সমালোচনা যারা করছেন তারা আসলে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই করছেন। তারা মনে করছেন বিদ্যানন্দের ভুল হলে এতে দেশের ক্ষতি হতে পারে। তবে কেউ যদি মনে করেন বিদ্যানন্দের কাছে স্বচ্ছতা নেই তাহলে যে কেউ মামলা করতে পারেন। এর আগে অনেকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে এবং সেগুলোর জবাবও দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গবাজারের পোড়া কাপড় দিয়ে তৈরি গয়নার ছবির বিষয়ে কিশোর কুমার দাস বলেন, এক নারী উদ্যোক্তার বানানো কিছু গয়নার ছবি দেখে বঙ্গবাজারের পোড়া কাপড় দিয়ে সেসব গয়না বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু বিদ্যানন্দের ফেসবুক পেজে ভুল করে ওই নারী উদ্যোক্তার তৈরি কিছু গয়নার ছবি পোস্ট করা হয়। এরপর থেকে এ বিষয়ে সমালোচনা শুরু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পরে ওই ছবিগুলো পেজ থেকে সরি নেওয়া হয়েছে এবং দুঃখ প্রকাশও করা হয়। কিন্তু এর পরেও বিদ্যানন্দকে নিয়ে সমালোচনা চলছে। তবে এই ভুলের জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায় আমার। এই অপরাধের জন্য পদ ছাড়তে হলেও আমার কোনো আপত্তি নেই।
বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, বিদ্যানন্দের ৮-১০টি ফেসবুক পেজ আছে। সেখানে কমপক্ষে ৩০ হাজার লেখা আছে, যার মধ্যে ৩০টি লেখায় ভুল থাকতে পারে। যারা এই লেখাগুলো লিখছেন কেউই বেতনভুক্ত নয়, সবাই স্বেচ্ছাসেবক। কোনো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সেখানে কতভাবে কাজ করা যায়, সেটাই বিদ্যানন্দ দেখাতে চেয়েছে। তবে অনেকে অভিযোগ করেছেন, বিদ্যানন্দ বঙ্গবাজারে কাজ করায় পুরো মনোযোগ বিদ্যানন্দের দিকে চলে গেছে। বিদ্যানন্দের জন্যই নাকি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর যে ধরনের প্রতিবাদ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বঙ্গবাজার তহবিলে দুই কোটি টাকা জমা হয়েছে। তা অনুষ্ঠান করেই বিতরণ করা হবে। তবে অনুষ্ঠান কোথায় হবে, তা আগে থেকে কেন জানানো হয় না, তা নিয়েও অনেকে সমালোচনা করছেন। এর উত্তর হলো, আগে থেকে জানানো হলে অনেককেই চাঁদা দিতে হয়। প্রতিষ্ঠান এটি চায় না বলেই আগে থেকে স্থান জানানো হয় না।
মজিদ চাচাকে নিয়ে কিশোর কুমার দাস বলেন, মজিদ চাচা একটি রূপক বা প্রতীকী চরিত্র। একবার সত্যিকার একজন উপকারভোগীর নাম প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে ওই ব্যক্তির নাম একজন বিখ্যাত লোকের নামের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তখন বলা হয়েছিল বিদ্যানন্দ ইচ্ছা করেই ওই বিখ্যাত ব্যক্তিকে অপমান করার জন্য কাজটি করেছে। এর পর থেকে শুধু মজিদ চাচা নন, এমন অনেক প্রতীকী নাম প্রচার করা হয়েছে।
পাহাড়ে বিদ্যানন্দের জমি কেনার বিষয়ে চলা সমালোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, অধিকাংশ জমির মালিক বিদ্যানন্দ না। এসব জমি লিজ নেওয়া হয়েছে। এসব জমিতে অনাথালয়, এতিমখানা, হাসপাতালের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিদ্যানন্দ। শর্ত অনুযায়ী এসব কার্যক্রম বন্ধ করলে জমি ফেরত দিয়ে দিতে হবে। এসব জমিতে কোনোভাবেই ব্যবসা করা যাবে না। পাহাড়ে অনাথালয়গুলোতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা থাকছে, স্থানীয় লোকজনই সেখানে কাজ করছেন। তবে স্থায়ী উদ্যোগের জন্য কুড়িগ্রামে মেয়েদের এতিমখানার জন্য এক একরের বেশি জায়গা এবং রামুতে এতিমখানার জন্য জমি কিনেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
এদিকে বিদ্যানন্দের যাকাত নেওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া বিদ্যানন্দের মূল তহবিলের মাত্র ৫ শতাংশ আসে যাকাত থেকে। গত বছর বিদ্যানন্দ চেয়েছিল আর যাকাত নেবে না। তখন একজন হুজুর বলেছিলেন, কেউ যাকাত দিতে চাইলে কেন নেবেন না? সে কারণে সিদ্ধান্ত পাল্টানো হয়।
বিদ্যানন্দের অডিট প্রতিবেদন নিয়ে তিনি বলেন, যাদের মনে বিদ্যানন্দের অডিট প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন জাগছে তারা কষ্ট করে অডিট ফার্মের কাছ থেকে তথ্য নেন। বিদ্যানন্দ ব্যক্তিগতভাবে কারো কাছ থেকে টাকা নেয় না। অডিট ফার্ম ব্যাংক থেকে হিসাব নিয়ে অডিট করে। তাদের বিভিন্ন ভাউচার দিতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী ট্যাক্স, ভ্যাট সব পরিশোধ করা হচ্ছে।