NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, শুক্রবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৫ | ১২ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
ভ্যাটিকানের উদ্দেশ্যে কাতার ত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টা সৌদির কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বেচবে যুক্তরাষ্ট্র, চুক্তি শিগগির হৃদয়কে দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর’ বললেন তামিম পুলিশের সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে ইতালি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জনগণমুখী সংসদের জন্য ই-পার্লামেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : আইন উপদেষ্টা প্রবাসীদের সহযোগিতায় দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে : ড. ইউনূস শান্তি আলোচনা বাধাগ্রস্ত, জেলেনস্কিকে দায়ী করছেন ট্রাম্প কাশ্মীরে হামলা মোদী সরকারের পাশে দাঁড়ালো বিরোধীদলগুলো বিদেশের ৪০ শহরে মুক্তি পাচ্ছে ‘জংলি’ কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
Logo
logo

পদ্মা সেতু : শস্য ভাণ্ডারের সমৃদ্ধি ফিরে পাবে বরিশাল


খবর   প্রকাশিত:  ১১ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৮:২৫ এএম

>
পদ্মা সেতু : শস্য ভাণ্ডারের সমৃদ্ধি ফিরে পাবে বরিশাল

বরিশাল বিভাগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৭ লাখ মেট্রিক টন চালের উৎপাদন হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ লাখ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৩১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ মেট্রিক টন। যা পূর্বের বছরের তুলনায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন বেশি। শুধু চাল নয়, প্রতি বছর শস্যেরও বাম্পার ফলন হতো। তবে তা হাতেগোনা কয়েকটি শস্যের উৎপাদনে সীমাবদ্ধ ছিল। এর বড় কারণ চাষিদের অনাগ্রহ। 

কৃষকদের নিয়ে কাজ করা সরকারি প্রতিষ্ঠন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, কোনো শস্য চাষের আগ্রহ হারানোর মূল কারণ কৃষকের সঠিক বাজার না পাওয়া। অথচ মোঘল আমল থেকে বরিশালকে বলা হতো বাংলার শস্য ভাণ্ডার। মাটির উর্বরতা আর অনুকূল পরিবেশের কারণে এই অঞ্চলের শস্যের কদর ছিল দেশ পেরিয়ে দেশের বাইরেও।

দিনে দিনে সেই ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলে বরিশাল। এর কারণে কৃষকের অনাগ্রহ সৃষ্টি হওয়া, উৎপাদিত পণ্যের বাজার না থাকা। ঐতিহ্য হারানোর সেই গ্লানি এবার মুছে ফেলার সুযোগ এনে দিয়েছে পদ্মা সেতু। যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া কৃষির সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধার হবে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান নাহিদা সুলতানা  বলেন, দেশের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে পদ্মা সেতু। এতে পূর্বে যেখানে পণ্য পরিবহনে ৭ থেকে ১৫ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লাগতো এখন অতটা সময় খরচ হবে না। আশা করা হচ্ছে সর্বোচ্চ চার ঘণ্টার মধ্যে কৃষিজাত পণ্য ঢাকায় পৌঁছাবে। চার ঘণ্টায় একটি সবজি বা শস্যে পচন শুরু হয় না। যে কারণে স্বল্প সময়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছাবে পণ্য। কৃষক লোকসানের মুখে পড়বে না। 

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে পুরো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় সমৃদ্ধি আসবে। বিশেষ করে কৃষিখাতে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আসবে এই অঞ্চলে। আমি মনে করি বাংলার শস্য ভাণ্ডার বরিশাল তার সমৃদ্ধি ফিরে পাবে।

dhakapost

শুধু অর্থনীতি বিশ্লেষকরা নন, কৃষকরাও মনে করেন কৃষির সুদিন ফেরাবে এই সেতু। বানারীপাড়ার কৃষক মতি আকন বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে দ্রুত ঢাকা যেতে পারব এটাই বড় লাভ। ধান, জমি, ফসলের দাম বাড়বে বলে মনে করি। 

আগৈলঝাড়ার পানচাষি রতন ঘরামি বলেন, এমনও দিন গেছে পাইকারের অভাবে বরজে পান বুড়ো হয়েছে। এখন পাইকার না আসলে নিজে গিয়ে কারওয়ান বাজার বিক্রি করে দিয়ে আসব।

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার তরমুজ চাষি ওবায়েদুল হক বলেন, তরমুজ চাষ করতাম আমরা। বিক্রি করতে গেলে দাম পেতাম না। অথচ কেজি দরে বাজারে উচ্চমূল্যে  তরমুজ বিক্রি হতো। এখন আর মাঝখানের কেউ পাবে না। বরিশাল পছন্দ না হলে  ঢাকা  নিয়ে যাব তরমুজ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের খামারবাড়ি বরিশালের উপ-পরিচালক হারুন উর রশিদ বলেন, এই সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে যে সম্প্রসারণ সৃষ্টি হবে তা অভাবনীয়। কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন, শ্রমঘন পরিবেশের সৃষ্টি হবে, কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়বে। আগে ক্রেতা সংকটে যেসব শস্য উৎপাদন হতো না অথচ বাজারে উচ্চমূল্যে তার চাহিদা ছিল, সেগুলো আবাদ হবে। কৃষকের রক্ত চুষে কেউ খেতে পারবে না কারণ দালাল, ফরিয়া, ব্যাপারীদের এখন আর প্রয়োজন হবে না। কৃষক তার ক্ষেত থেকে শস্য উত্তোলন করে সরাসরি ঢাকায় নিয়ে যেতে পারবেন। সেখানে তিনি তাজা শস্য সরবারহ করে ভালো দাম পাবেন। ওই কৃষক ভোরে ঢাকায় গিয়ে তার পণ্য বিক্রি করে আবার রাতে এসে বাড়িতে ঘুমাতে পারবেন। 

তিনি বলেন, যেহেতু দক্ষিণাঞ্চলের মাটি খুবই উর্বর। এখানে সব ধরনের শস্য উৎপাদিত হয়। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।

 হারুন উর রশিদ বলেন, এই অঞ্চলের তরমুজ, পেয়ারা, আমড়া, মালটা, সবজি বিক্রির জন্য কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর অপেক্ষায় থাকতে হবে না। পচনের ভয়ে তরমুজ এখন আর অল্প দামে বেচতে হবে না। দিনে ক্ষেত থেকে যা তুলবেন তা নিয়ে কৃষক সরাসরি দেশের বড় বড় বাজারে চলে যেতে পারবেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিবিপ্লব সূচিত হবে। বাংলার শস্য ভাণ্ডার বরিশাল বিভাগ তার পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।