খবর প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর, ২০২৪, ০৩:৫৬ এএম
ঢাকা: দেড় যুগ আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার দুই মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা) আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন), আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে।
বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে আজ সোমবার শুনানি শুরু হয় বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে তার সঙ্গে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আরশাদুর রউফ ও শিশির মনির।
পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটি আজকে থেকে শুনানি শুরু হলো। শুনানিতে মামলার এজাহার পড়ার পর অভিযোগপত্রের কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র পড়া শেষ হবে বলে আশা করি। ’
এ ছাড়া আগামী বছরের প্রথম দিকে শুনানি শেষ হতে পারে বলেও জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। এর আগে গত ৩০ ও ৩১ অক্টোবর মামলা দুটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠলে শুনানির অপেক্ষায় রাখেন আদালত।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। হামলার পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। থানা পুলিশ, ডিবির হাত ঘুরে সিআইডি এই মামলার তদন্তভার পায়।
ঘটনার চার বছর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।
জঙ্গি দল হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে সেখানে আসামি করা হয়। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচারও শুরু হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আসামির তালিকায় আরো ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।
সেখানে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ চারদলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নাম আসে। পরে হামলার ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ওই মামলার রায় হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে। আর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সেই সঙ্গে ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়।
পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় এসে পৌঁছে। ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে রায়সহ মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত।
ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক প্রস্তুত হলে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। গত বছর ১৬ আগস্ট পেপারবুক বিজি প্রেস থেকে তৈরির পর সুপ্রিম কোর্টে এসে পৌঁছয়। এরপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলাটি শুনানির জন্য বেঞ্চ ঠিক করে দেন প্রধান বিচারপতি।