খবর প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৪:৪০ এএম
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় সরকার গঠনের ব্যাপারটি সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এই সংকটাবস্থা থেকে উত্তরণে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান ও রাজা আল সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমাদ শাহ মালয়েশিয়ার সুলতানদের সংস্থা ‘কাউন্সিলস অব রুলার্স’র বৈঠক ডেকেছেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার এই বৈঠকের সময়সূচি নির্ধারিত হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মালয়েশিয়ায়ও একসময় রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। বর্তমানে ওয়েস্টমিনিস্টার (মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকার ) ধাঁচের সরকার প্রচলিত; কিন্তু সাংবিধানিকভাবে এখনও মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান দেশটির রাজা।
মালয়েশিয়ার মোট প্রদেশের সংখ্যা ৯ টি। সংবিধান অনুযায়ী, প্রতিটি প্রদেশের প্রাদেশিক প্রধানের পদবী সুলতান। এই সুলতানরা সবাই রাজপরিবারের সদস্য।
‘কাউন্সিল অব রুলার্স’ পরিষদটি মালয়েশিয়ার রাজা ও সুলতানদের সমন্বয়ে গঠিত। পদাধিকারবলে রাজা এই পরিষদের প্রধান। বাদশাহ ও সুলতানরা দেশের শাসনব্যবস্থায় সরাসরি কখনও হস্তক্ষেপ করেন না, তবে তাদের কিছু সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে। দেশটিতে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী দল কিংবা জোটের শীর্ষ নেতাকে প্রধানমন্ত্রীপদের নিয়োগপত্র দেন রাজা।
সাধারণত বড় কোনো সংকট উপস্থিত হলেই কেবল কাউন্সিল অব রুলার্সের বৈঠক হয়; আর এই মুহূর্তে এক অভূতপূর্ব সংকটের মধ্যে পড়েছে মালয়েশিয়া। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দেওয়ান রাকাইতের নির্বাচনের পর থেকে এ সংকটের শুরু।
শনিবার দেওয়ান রাকিয়াত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া বড় তিনটি জোট হলো আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী পাকাতান হারাপান কোয়ালিশন, মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকোব নেতৃত্বাধীন বারিসান ন্যাশনাল কোয়ালিশন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল জোট পেরিকাতান ন্যাশনাল ব্লক।
দেওয়ান রাকিয়াতের মোট আসন সংখ্যা ২২২টি। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করতে হলে বিজয়ী দল বা জোটকে রাকিয়াতের অন্তত ১১২টি আসনে জয়ী হতে হবে।
কিন্তু এই তিন জোটের একটিও এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পাকাতান হারাপান কোয়ালিশন ৮২টি, পেরিকাতান ন্যাশনাল ব্লক ৭৩টি এবং বারিসান ন্যাশনাল কোয়ালিশন ৩০টি আসনে জয়ী হয়েছে।
এক্ষেত্রে সমাধানের একটি পথ ছিল — এই তিনটি জোটের মধ্যে যে কোনো দু’টির সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা। সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছিল; সবচেয়ে বেশি আসনজয়ী পাকাতান হারাপান নেতারা বারিসান ন্যাশনালের নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করেছিলেন।
পাকাতান হারাপান কোয়ালিশনের শীর্ষ নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম জানিয়েছিলেন, তিনি রক্ষণশীল পেরিকাতান ন্যাশনাল ব্লকের সঙ্গে জোটে যেতে আগ্রহী নন এবং জোটসঙ্গী হিসেবে বারিসান ন্যাশনালকে চাইছেন।
কিন্তু পাকাতান হারাপান ও বারিসান ন্যাশনালের মধ্যকার বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে। বারিসান ন্যাশনালের শীর্ষ নেতা ইসমাইল সাবরি ইয়াকোব মঙ্গলবার রাজাকে জানান, তারা পাকাতান হারাপান কিংবা পেরিকাতান— কারোর সঙ্গেই জোটে যেতে আগ্রহী নন।
বারিসান ন্যাশনালের মত জানার পর রাজা আল সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমদ শাহ পেরিকাতান ন্যাশনাল ব্লককে পাকাতান হারাপানের সঙ্গে জোট গঠনের জন্য আহ্বান জানান, কিন্তু এই জোটের শীর্ষ নেতা মুহিদ্দিন ইয়াসিন জানান, তার জোটভুক্ত দলের নেতারা ‘শত্রুদের’ সঙ্গে জোটে যেতে প্রস্তুত নন।