খবর প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৭:০৮ এএম
ঢাকা: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন রোডম্যাপে নগর দরিদ্ররা উপেক্ষিত হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, সামগ্রিকভাবে এসডিজি অর্জনে কিছুটা সফলতা এলেও নগরের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন বাদ দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও এসডিজি বাস্তবায়ন সফল হবে না। তাই নগর দারিদ্র্য নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নগর অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তারা এসব কথা বলেন।
কোয়ালিশন ফর দ্য আরবার পুওর (কাপ) আয়োজিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের (ডিএসকে) নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ। আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, কনসার্ন ওয়াল্ডওয়াইড বাংলাদেশের প্রতিনিধি গ্রিটা ফিটজেরাল্ড, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহিন আক্তার সাথী, গবেষক আমিনুর রসুল বাবুল, কাপ নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার রেবেকা সান ইয়াত ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাহবুবুল হক, বস্তিবাসী অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপতি হোসনে আরা বেগম রাফেজা প্রমুখ।
সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেন, ‘পুনর্বাসন ছাড়া বস্তি উচ্ছেদ করবে না সরকার। পরিকল্পিত নগরায়ণের লক্ষ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে হবে। তবে সেটাও হবে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে। ’
তিনি বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে সার্বক্ষণিক চিন্তা করেন। কিন্তু সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে সেই চিন্তা বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। বস্তিবাসীরা কারো কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী দল ও সরকারের সঙ্গে থাকবেন। আপনাদের পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা হবে না। আপনাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। ’
দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সরকারের নেওয়া কর্মসূচি তুলে ধরে শামসুল হক টুকু বলেন, বঙ্গবন্ধুর দেখানো দারিদ্র্য বিমোচনের পথে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পরিকল্পনা ও নীতিতে সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে। গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য আশ্রয়ণ, ঘরে ফেরা, একটি বাড়ি, একটি খামার, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার মতো কর্মসূচিগুলো চালু হয়েছে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মেয়েদের জন্য বৃত্তি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বই বিতরণ শুরু হয়। দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি ক্রমাগত বাড়ছে। ’
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে বস্তিবাসীদের উন্নয়ন জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকারের রোডম্যাপের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করতে হবে। বিশেষ করে বস্তিবাসীদের আবাসনের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। সবার আগে বস্তিবাসীদের একটি ডাটাবেইস তৈরি করতে হবে। যার মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি যেকোনো কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হবে। ’ সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ফলে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙনের ফলে উপকূলসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বাস্তুভিটা হারিয়ে কাজের সন্ধানে শহরমুখী হচ্ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই বস্তি, সরকারি জায়গা এবং বেশ কিছু মানুষ ভাসমান অবস্থায় জীবন চালিয়ে যাচ্ছে। ’
আরো বলা হয়, এ মানুষগুলো অপরিচ্ছন্ন, অমানবিক ও ঘিঞ্জি এলাকায় পয়োনিষ্কাশনসহ মৌলিক অধিকার থেকে পিছিয়ে আছে। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থনৈতিক সংকটে অমানবিক জীবন যাপন করছে। অথচ তাদেরকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই এই অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।