NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, শনিবার, মে ৩, ২০২৫ | ২০ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
সেপ্টেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগকারী নিয়োগ - প্রেস সচিব সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ১৭ হাজার ৬৯৪ হজযাত্রী ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে চীনের ভূমিকা কী হবে? ইসরায়েলে এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি দাবানল, ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছেই বলিউডের উন্নতির জন্য যেসব পরামর্শ দিলেন আমির খান গত ১৫ বছরে সাংবাদিকদের ভূমিকা মূল্যায়নে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হবে: প্রেসসচিব রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের পরিচয়পত্র পেশ সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে হামলা চালালো ইসরায়েল এশিয়া ও আফ্রিকার তিন দেশে ৪টি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা হানিয়ার নামে ‘পাক সেনার বিরুদ্ধে’ পোস্ট, যা বললেন অভিনেত্রী
Logo
logo

বিরোধী দল পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করছে : প্রধানমন্ত্রী


খবর   প্রকাশিত:  ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৫:২৩ এএম

>
বিরোধী দল পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করছে : প্রধানমন্ত্রী

দেশের ক্রান্তিকালের সুযোগ নিয়ে বিরোধী দল অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

বুধবার (২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সরকার প্রধান এ মন্তব্য করেন।

চুন্নু তার প্রশ্নে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন কি না- জানতে চান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বললেন? আমার প্রশ্ন এখানে। দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে, তখন আমাদের যারা বিরোধী দল আছে, আমি সবার কথা বলছি- তাদের মাঝে ওই উদ্বেগ আমরা দেখিনি। বরং দেখেছি এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায় সেটাই যেন তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা করা কি সমীচীন হচ্ছে? সমীচীন হচ্ছে না। তাহলে ওই অনুভূতিটা কোথায়? অনুভূতিটা থাকতে হবে দেশের পথে। দেশপ্রেমটা থাকতে হবে। আজ বিশ্বব্যাপী ক্রাইসিস- এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা আর ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা– এই প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে।

তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ শুধু মুখে বললে হবে না। নিজে থেকে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা কিন্তু সবাইকে নিয়ে কাজ করি। আমরা যখন উন্নয়নটা করি, কোন এলাকা আমাদের ভোট দিল বেশি, আর কোন এলাকা দিল না, তা বিবেচনা করি না। জনমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন। গণমানুষের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করি। ঠিক তেমনি দুর্যোগে মোকাবিলায় আমরা বসে থাকিনি। অনেকে তো সমালোচনা করে যাচ্ছেন। বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এক মুঠো চালও দিয়ে বা হাত দিয়ে পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখিনি।

তিনি আরও বলেন, আমরা সবসময় ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা আসবেন, তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এর আগে শেখ হাসিনা আরও বলেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা ও পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আমি খোলামেলা কথা বলেছি। যদিও অনেকে আমার সমালোচনাও করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন এভাবে কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে। ভয় নয়, মানুষকে সতর্ক করার জন্য এটা বলেছি। শুধু সতর্ক নয়, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।

তিনি বলেন, আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমরা ফসল ফলাব। খাদ্য উৎপাদন করবো। আমরা ব্যবহার করব। এবং আমরা সেটা করতে পারি। বাংলাদেশ পারে—  আমরা অনেক ক্ষেত্রে এটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছি। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাই শুধু নই, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কষ্টে ভুগছে। পণ্য পরিবহনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে খাদ্য বা তেল কিনতাম, যুদ্ধের কারণে সেখান থেকে কিনতে পারছি না। বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করছি। সেখান থেকে যাতে আমরা খাদ্য, ডিজেল, তেল, সার আনতে পারি সেই ব্যবস্থা করছি। এমনকি এলএনজি আমদানির জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং নিয়েছি।

গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই সঙ্গে স্যাঙ্কশন। এর ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের অবস্থাই খুব টালমাটাল। বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে এখনো পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে বলে মনে করি। ইউরোপ আমেরিকা গ্রেট ব্রিটেনসহ বিভিন্ন  দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতিটি জায়গায় জ্বালানি তেলের অভাব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সব জায়গায় লোডশেডিং। গ্রেট ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ ভাগ বেড়েছে। তারা সব কিছু রেশন করে দিচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদের খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। বার বার বলছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। যখন বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব ও মূল্যস্ফীতি তখন আমাদের দেশে নিজেদের মাটি ও মানুষ নিয়ে চলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।

বাজার থেকে পণ্য গায়েব হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তো আছেই। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথাটা চিন্তা করে না। এজন্য তারা অনেক সময় পণ্য লুকিয়ে রাখে এবং কৃত্রিম উপায়ে জিনিসের দাম বাড়ায়। এতে অনেকের ইন্ধনও থাকতে পারে। তবে আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থায় তাদের সঙ্গে সঙ্গে খোঁজা হয়, ধরা হয়। ইতোমধ্যে অনেক পণ্য কিন্তু খুঁজে বের করা হয়েছে  এবং  তা বাজারজাত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সব সময় সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। কেউ পণ্য লুকিয়ে রেখে মূল্য বাড়ানোর চেষ্টা করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চলমান থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে জাতীয় দৈনিকের একটি রিপোর্ট, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির প্রতিবেদন ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রজেক্টের রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, বাংলাদেশে ৬৮ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এই রিপোর্ট ওয়ার্ল্ড ফুড প্রজেক্টের। সিপিডি বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় খাবারের দাম সবচেয়ে বেশি। যে ৪২টি দেশে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে বাংলাদেশ তার একটি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বারবার বলছেন দুর্ভিক্ষ হতে পারে সবাই যেন সাবধান হয়। একটি পত্রিকার লিড নিউজ চাল আটা ভুট্টার দামে রেকর্ড। খোলা আটা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৩০টাকা। তা অক্টোবরে এসে দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকায় ।  মোটা চাল ২০২০ সালের  জানুয়ারিতে ছিল ৩২ টাকা, ২২ সালের সেপ্টেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকায়। ভুট্টা ২৪ টাকা থেকে হয়েছে ৩৪ দশমিক ৫ টাকা।

পরে রুমিন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে—  তা জানতে চান।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগেই বলেছি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার কিছু লোক থাকে। এবং সেইসব লোকের কথাই মাননীয় সদস্য বলেছেন। যে পত্রিকাগুলোর নাম তিনি নিয়েছেন তার মধ্যে একটা পত্রিকা কিন্তু আমি কখনো পড়ি না। পড়ি না এই কারণে তারা সবসময় উল্টো দিকে থাকে। এরা কখনো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক তা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তারা পছন্দ করে। পছন্দ করে এই জন্য যে, তাদের যেন একটু ভালো হয়, কোনো রকম কদর বাড়ে সেজন্য। আর যে প্রতিষ্ঠানটির কথা বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠানটি কোন জায়গা থেকে হিসাব পায় জানি না। এই হিসাব তাদের কখনোই সঠিক হয় না।

তিনি বলেন, আজ সারাবিশ্বে যেভাবে পণ্যমূল্য বেড়েছে, সেটা যদি দেখেন, সে তুলনায় বাংলাদেশে..। বাংলাদেশে তো দাম বেড়েছে আমিতো অস্বীকার করছি না। আর দাম বেড়েছে বলেই যারা ক্রয় করার সক্ষমতা রাখে না, আমরা ভর্তুকি দিয়ে স্বল্প মূল্যে তাদের দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেডলাইন দিয়েছে সব দেশের থেকে বাংলাদেশে পণ্যমূল্য বেশি। কিন্তু ভেতরে যে ডাটা দিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ হিসাবে আসে না। বাংলাদেশ কয়েকটি দেশ থেকে ভালো অবস্থায় আছে। এরা কারসাজিটা এভাবেই করে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু পত্রিকা এখন এমনভাবে একটা হেডলাইন করে যা বিভ্রান্তিকর।  সঠিক তথ্য তারা দেয় না। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়।

সিপিডির নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বনে,  যে প্রতিষ্ঠানটির কথা উনি উল্লেখ করেছেন সে প্রতিষ্ঠানের তো কোনো কিছুই ভালো লাগে না । তাদের ভাল লাগে কখন? যখন সেনা শাসন ছিল, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। তাদের একটু কদর যদি বাড়ত—  এই আশায় তারা বসে থাকে। এটাই বাস্তবতা।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের দুঃখ কষ্ট লাঘবে যা যা করণীয়, আমাদের সাধ্যমত করে যাব। পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য যুদ্ধ এবং স্যাঙ্কশনের জন্য প্রত্যেক জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। যুদ্ধ বন্ধ করার কথা আমি জাতিসংঘেও বলে এসেছি।

তিনি বলেন, অনেকে বলে এসব কথা বললে কোনো কোনো দেশ নারাজ হবে। কে নারাজ হলো জানি না। সারা বিশ্বের মানুষ ভুক্তভোগী। ইংল্যান্ডে বহু মানুষের কয়েক মাস মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। তিন বেলা খাবার খেতে পারে না। আমেরিকায় দারিদ্র্য বেড়ে গেছে। অনেকে খাবার পাচ্ছে না, থাকার ঘর নেই, রোগের চিকিৎসা নেই। গৃহহীন মানুষের ভিড়। ইউরোপের অবস্থাও এ ধরনের। শীত এসে যাচ্ছে। তারা গরম পানি পাচ্ছে না।

শেখ হাসিনা বলেন, যে পত্রিকা আর যে প্রতিষ্ঠান, ওই প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আমার খুব ভালো চেনা আছে। আমাদের মতিয়া আপার ভাষায় বলতে হয়, একটা প্রতিষ্ঠান আছে, এর প্রধানকে মতিয়া আপা আসল নাম বাদ দিয়ে বলেছেন সেনাপ্রিয়। অর্থাৎ অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে তাদের একটু দাম বাড়ে, মূল্য বাড়ে। এটাই বাস্তবতা। আমরা জনগণের পাশে আছি, জনগণের সঙ্গে থাকব। তারা যেটা বলছে বলতে দিন। আমার যা কাজ করার, তা আমি করে যাব।

গণফোরামের দলীয় সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার চরম আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য দেশের জনসাধারণের জীবনমান স্বাভাবিক রাখতে ও দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।