খবর প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৭:০২ এএম
ঢাকা: দায়মুক্তি ও ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশ কমিশনারকে সভা-সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধের ক্ষমতা দিয়ে ১৯৭৬ সালের ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি অর্ডিন্যান্স) অধ্যাদেশের বিধান চ্যালেঞ্জ করা রিটে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিনের বক্তব্য শুনবেন হাইকোর্ট।
এর জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বেলা দেড়টা পর্যন্ত রিটের শুনানি মুলতবি ঘোষণা করেছেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ।
আজ বুধবার রিটকারী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের আংশিক শুনানি হয়। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ রিটে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনতে চাচ্ছেন আদালত। যে কারণে বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। ’
এর আগে সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে শুনানিতে আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী বলেন, ‘ডিএমপি অধ্যাদেশের ২৯ ধারা সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ বলছে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা, নিষেধ-সাপেক্ষে সমাবেশ করার কথা। আর অধ্যাদেশে পুলিশ কমিশনারকে সভা-সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সীমাবদ্ধতা (রেসট্রিকশন) আর নিষিদ্ধ (প্রোহিবিশন) সমার্থক নয়। দুটি শব্দের দুই অর্থ। ’
তিনি আরো বলেন, ‘সংবিধান যুক্তিসংগত বাধা, নিষেধ-সাপেক্ষে সভা-সমাবেশ সীমাবদ্ধ করেছেন, নিষিদ্ধ করেননি। সুতরাং অধ্যাদেশের এই বিধান অসাংবিধানিক এবং সাংঘর্ষিক। আর ১০৫ ধারায় যে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার পরিপন্থী কারণে ধারাটি গোটা সংবিধান পরিপন্থী। ’
সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা নিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।
আর ১৯৭৬ সালের ডিএমপি অধ্যাদেশের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, জনসাধারণের শান্তি বা নিরাপত্তা রক্ষার জন্য পুলিশ কমিশনার যখন যতদিন প্রয়োজন মনে করবেন লিখিত আদেশে সভা, সমাবেশ বা মিছিল নিষিদ্ধ করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ কোনো নিষেধাজ্ঞা সরকারের অনুমতি ব্যতীত ৩০ দিনের বেশি বলবৎ থাকবে না। অর্থাৎ সরকারের অনুমতি ছাড়াই ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার ৩০ দিন মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে পারেন। আর সরকারের অনুমতি নিয়ে অনির্দিষ্টকাল নিষিদ্ধ করতে পারবেন।
একই অধ্যাদেশের ১০৫ ধারায় বলা হয়েছে, এ অধ্যাদেশের কোনো বিধান অথবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইন বা তদুদ্দেশ্যে প্রণীত কোনো বিধি, প্রবিধি, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের আদেশ বা নির্দেশের অধীনে সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কাজ বা ক্ষতির জন্য কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যধারা (ব্যবস্থা) গ্রহণ করা যাবে না।
রিটকারী আইনজীবীর বক্তব্যের বিরোধিতা করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ রায় বলেন, ‘সব সময় সমাবেশ বন্ধ করা হয় না। যখন বন্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তখন সমাবেশ বন্ধ করা হয়। যেমন একই স্থানে দুই দল সমাবেশ ডাকলে তা অশান্তির সৃষ্টি করে, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। তাই জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ’
ডিএমপি অধ্যাদেশের ১০৫ ধারার পক্ষে এ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে সভা-সমাবেশে কারো অস্ত্র নিয়ে আসার কথা না। কিন্তু যখন সমাবেশে বা মিছিলে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি বাধে বা এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলা করে বা বোমা হামলা হয়, তখন তার দায়ও পুলিশ এবং সরকারকে নিতে হয়। ’
তিনি আরো বলেন, ‘জনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের দায়িত্ব। ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হয় বা প্রয়োজন পড়ে। তা ছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে জনস্বার্থের রিট আবেদন করা যায় তা আপিল বিভাগের রায়ে বলা আছে। এ রিট আদেনটির ক্ষেত্রে সেই শর্ত পূরণ হয়নি। তাই এ রিট আবেদনটি খারিজযোগ্য। ’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অ্যর্ডিন্যান্স ১৯৭৬-এর ২৯ ও ১০৫ ধারা এবং ২০০৬ সালে প্রণীত এ অধ্যাদেশের বিধি ‘ঢাকা মহানগর পুলিশ (সভা, সমাবেশ, মিছিল এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালার’ বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ২০ অক্টোবর জনস্বার্থে এ রিট আবেদনটি করেন তিন আইনজীবীসহ পাঁচ ব্যক্তি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী আবেদনকারীদের একজন। বাকি চার আবেদনকারী হলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কে এম জাবির, চাঁদপুর আদালতের আইনজীবী সেলিম আকবর, রাজধানীর বাসিন্দা শাহ নুরুজ্জামান ও মোহাম্মদ ইয়াসিন।
রিটে আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়েছে।