NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, মে ১, ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় শিল্পী সমরজিৎ রায়ের চিরবিদায়


খবর   প্রকাশিত:  ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৫:৪৮ এএম

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় শিল্পী সমরজিৎ রায়ের চিরবিদায়

ঢাকা: শত শত শিক্ষার্থী, সহকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরবিদায় নিলেন একুশে পদকজয়ী প্রবীণ চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী৷ সোমবার দুপুরে সবুজ বাগ কালীবাড়ি মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।  

এর আগে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রবিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। আজ সোমবার সকাল দশটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মৃতদেহ আনা হয়। সেখানে তার মৃতদেহে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক উপ কমিটি - বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ, ঢাকা আর্ট কলেজ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগ।

 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এসময় উপাচার্য বলেন, অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী ছিলেন একজন প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে অত্যন্ত সুনামের সাথে দীর্ঘকাল তিনি শিক্ষকতা করেছেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনার খ্যাতিমান এই গুণী শিল্পী দেশের চারুকলা শিক্ষাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। সৃজনশীল এই শিল্পী দেশে অনেক গুণী শিল্পীর জন্ম দিয়েছেন। চিত্রকলায় অনন্য অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।  

বেলা সাড়ে এগারোটায় তার মৃতদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসন, জাতীয় জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।  

এসময় পরিবারের পক্ষ থেকে তার সন্তান সুরজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, তিনি শুধু আমার বাবা ছিলেন না, আমার বন্ধু ছিলেন, আমার ভালোলাগার জায়গা ছিলেন। আমি আমার সব সমস্যার সমাধান খুঁজতাম আমার বাবার কাছে। বাবার মুখ থেকে আমার সমাধানটুকু খুঁজে নিয়ে আসতাম। তিনি আমাকে শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আশীর্বাদ করে গেছেন। আমার বাবার শূন্যতা আমার জীবনে কখনো পূরণ হবে না৷ এসময় তিনি সকলের কাছে সমরজিৎ রায় চৌধুরীর জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন৷ 

নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, সমরজিৎ রায় নিভৃতচারী একজন মানুষ ছিলেন। যখনি কোনো মেলার বা অসমাম্প্রদায়িক ছবি আঁকতে বলতাম সমরজিৎ দা অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সেটি আঁকতে পারতেন। তার যে সৃষ্টি কর্ম তা তার পরবর্তী শিল্পী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং তার জীবনাচরণ সকলের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।  

শিল্পী হাসেম খান বলেন, সমরজিৎ রায় নামের মধ্যেই একটি আভিজাত্য আছে এবং তিনি সারাজীবন এই আবিজাত্য নিয়ে জীবনযাপন করেছেন। এই আভিজাত্য কোনো অহংকার নয়৷ তার মতো নিষ্ঠাবান শিক্ষক খুব কমই ছিলো। তিনি এখন নেই কিন্তু তার সান্নিধ্যে যারা এসেছেন তারা সবসময় তাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে। একজন ভালো মানুষের খোঁজ যদি কেও নিতে চায়, খুব সহজে বলা যায় তিনি শিল্পী সমজিৎ রায় চৌধুরী।  

চিত্রশিল্পী কামাল পাশা বলেন, এদেশের সংবিধানের যে অলংকরণ সেটি তৈরিতে তিনি কাজ করেছেন। আমাদের পবিত্র সংবিধানে তার হাতের ছোঁয়া আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম তৈরিতেও তার অবদান রয়েছে। তার কাজে তিনি আমাদেরকে ধন্য করেছেন, জাতিকে ধন্য করেছেন৷ 

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, বাংলাদেশের সংবিধান যতদিন থাকবেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী ততদিন সকলের মনের মধ্যে থাকবেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করতেন, আমাদের সংস্কৃতিতে ধারণ করতেন। তার প্রয়াণে আমরা শুধু আজকে একজন বড় মাপের শিল্পীকে হারাইনি, একজন মহান শিক্ষককে হারাইনি, একজন বড় দেশপ্রেমিককে হারিয়েছি।  

শহীদ মিনার থেকে বেলা সাড়ে বারোটায় তার মৃতদেহ সবুজবাগ কালীবাড়ি মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়৷