খবর প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারী, ২০২৪, ১২:০৫ পিএম
করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর আগে সর্বশেষ বিদেশ ভ্রমণ করেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এরপর প্রায় এক হাজার দিন চীনের বাইরে আর বের হননি পরাশক্তি এই দেশটির প্রেসিডেন্ট। এতে করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যবস্থায় ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়েছে চীন।
তবে আবারও মাঠে নামতে চলেছেন জিনপিং। আর সেটিও এই সপ্তাহেই। মূলত চলতি সপ্তাহেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আবারও বিশ্ব মঞ্চে আবির্ভূত হচ্ছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার বৈঠক করবেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে উভয় নেতা এদিনই প্রথম মুখোমুখি ব্যক্তিগত বৈঠকে বসতে চলেছেন।
মূলত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কটিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে দেখছে বেইজিং। উভয় নেতা উজবেকিস্তানে চীনা-প্রতিষ্ঠিত নিরাপত্তা ফোরামের সম্মেলনের অবসরে বৈঠক করবেন। এই সম্মেলনে ভারত থেকে ইরান পর্যন্ত অনেক দেশের নেতা একত্রিত হবেন এবং এই ফোরামের লক্ষ্য একটি বহুমুখী বিশ্ব ব্যবস্থা গঠনকে ত্বরান্বিত করা।
তবে এর আগে বুধবার কাজাখস্তানে থামবেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এই দেশটিতে তিনি নয় বছর আগে তার স্বাক্ষরিত বেল্ট-অ্যান্ড-রোড বাণিজ্য-ও-অবকাঠামো পরিকল্পনাটি উন্মোচন করেছিলেন। সেই পররাষ্ট্র-নীতি উদ্যোগটি তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের জোট গ্রুপ অব সেভেনের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
উভয় দেশে জিনপিংয়ের এমন একটি সফর তার দৃষ্টিকে আরও শক্তিশালী করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বা সামরিক চাপের হুমকি ছাড়াই বেইজিংয়ের স্বার্থ প্রসারিত করতে পারে চীন। এছাড়া চীনের শীর্ষ এই নেতা আগামী মাসে কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে সেই এজেন্ডা ব্যাখ্যাও করবেন। সেখানেই তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির নেতা হিসাবে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গবেষণা সংস্থা ট্রিভিয়াম চায়নার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ট্রে ম্যাকআর্ভার বলেছেন, ‘শি জিনপিং এমন একটি দিক দিয়ে বৈশ্বিক বিষয়গুলোকে পুনর্নির্মাণ করার চেষ্টা করছেন; যা পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ করবে। এছাড়া জিনপিংয়ের এই কৌশল গ্রুপিং এবং এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচার করে যা চীনের স্বার্থ ও বিশ্বদর্শনের পক্ষে বেশি অনুকূল।’
পুতিনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের বৈঠক নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি (পশ্চিমাদের) খুব স্পষ্টভাবে এই সংকেত দিচ্ছে যে, চলমান বৈশ্বিক সংঘাতে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে চীন।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করার জন্য বেইজিং সফর করেছিলেন। তবে ঠিক সেই সময়ই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের সীমান্তে জড়ো হচ্ছিল। উভয় নেতা সেসময় তাদের অংশীদারিত্বে ‘কোনো সীমা’ না রাখার ব্যাপারে সম্মত হন।
অর্থাৎ রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ করার কয়েক সপ্তাহ আগে ‘সীমাহীন’ বন্ধুত্ব ঘোষণা করেছিলেন পুতিন ও জিনপিং। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনে বেশ চাপে পড়েছেন পুতিন। সেখানে পশ্চিমা অস্ত্রে সজ্জিত ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ান সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করছে এবং রুশ বাহিনীর কাছ থেকে বিশাল ভূখণ্ড পুনর্দখলও করতে সক্ষম হয়েছে কিয়েভ।