বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া’র জাতীয় শোক দিবস পালন
খবর
প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৭:১৮ এএম

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া শাখার উদ্যোগে ২৮ আগস্ট সিডনির রকডেলের স্টুডেন্ট বিরিয়ানি হাউসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত, দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন হাবিব হাসান টুলু।
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় শোক সভার কার্যক্রম। ওইদিন নিহত সবার আত্মার প্রতি সম্মান জানাতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া, বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিডনি, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ সেচ্ছাসেবক লীগ অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অস্ট্রেলিয়ার যৌথ অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বেদনার্ত আগস্টের শোক সভা।
শোক সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত অতিথি, মহিলা আসন-৫ সাংসদ নাহিদ ইজাহার খান।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ড. সিরাজুল হকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক পিএস চুন্নুর সঞ্চালনায় শোক সভা শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা নির্মলেন্দু গুণের কবিতা পাঠ করে সবাইকে মুগ্ধ করেন এই প্রজন্মের ছেলে পৃথিবী তাজওয়ার এবং তার মা পূরবী পারমিতা বোস। নিজের লেখা কবিতাংশ পাঠ করেন সুহৃদ সোহান হক।
প্রধান অতিথি নাহিদ ইজাহার খান তার শোকাপ্লুত বক্তৃতায় বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নভেম্বরের অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে খালেদ মোশাররফ, এটিএম হায়দারের সঙ্গে তার পিতা বীরবিক্রম খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযাদ্ধা কর্নেল নাজমুল হুদাকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তখন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের নির্দেশেই তাকে রংপুর থেকে তলব করে ঢাকা এনে হত্যা করা হয়।
সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল বীর মুক্তিযাদ্ধাকে সেদিন গার্ড অব অনারও প্রদান করা হয়নি। তার কাফনে মোড়া মৃতদেহ যখন নিয়ে যাওয়া হয় তখন তার সাত বছরের ছেলে এহেতেশাম হুদা কফিন টেনে ধরলে এবং পাঁচ বছরের মেয়ে নাহিদ ইজাহার খানের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়েছিল। তিনি তার পিতৃ হত্যার বিচার চেয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার নেপথ্য কুশীলবদের বিচারের আওতায় আনার জন্য তীব্র দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ব্যতীত বাংলাদেশকে ভাবা যায় না।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা সিডনির ম্যাকুয়ারি ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের প্রাক্তন ডিন এবং এমিরিটাস প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল গঠন করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নুরেমবার্গ ট্রায়ালের আদলে তিনজন বিশ্বখ্যাত আইনজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছিলেন এই ট্রাইবুনালে। তিনি বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। আজকের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের পৃথিবীতে বাংলাদেশের ট্রাইবুনালটির বিচার প্রণালী অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি, কলামিস্ট ও বিজ্ঞানী ড. রতন কুন্ডু তার বক্তৃতায় প্রধান অতিথি বরাবর পাঁচটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন এবং তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। দাবিগুলো হচ্ছে:-
১. পলাতক খুনি আসামিদের খুঁজে বের করে দেশে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা।
২. অনতিবিলম্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে নেপথ্য কুশীলবদের বিচারের ব্যবস্থা করা।
৩. দলের ভিতরে শুদ্ধি অভিজান চালিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, প্রতিবিপ্লবী কমরেড ও ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী মুসলিম লীগের স্বপ্নদ্রষ্টাদের বহিষ্কার করা।
৪. ৭২ এর সংবিধান অবিকৃতভাবে ফিরিয়ে আনা।
৫. ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে সংখ্যালঘু অত্যাচার বন্ধে সাইবার ক্রাইম (ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট) আইনের সংশোধন ও অভিযুক্তদের স্পেশাল ট্রাইবুনালে বিচারের ব্যবস্থা করা।
এছাড়াও অত্যন্ত গঠনমূলক ও পরামর্শমূলক বক্তব্য রাখেন বাসভূমির কর্ণধার, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও লেখক আকিদুল ইসলাম, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনির প্রাক্তন শিক্ষক ড. মাসুদুল হক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিডনির সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আজাদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ড. প্রদীপ রায়হান, আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়ার সহ-সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান রানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খান রতন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বাসার রিপন ও দিদার হোসেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিডনির সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন লাল্টু, ড. তারিকুল ইসলাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেহেদী হাসান, সেচ্ছাসেবক লীগের স্বপন দেওয়ান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
মূল অনুষ্ঠানের পরিকল্পনায় ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বিলকিস জাহান। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান কচি, সাংগঠনিক সম্পাদক দিদার হোসেন ও কোষাধক্ষ্য আব্দুস সালাম। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ও কারিগরী সহযোগিতা দিয়েছে চারু। বক্তব্য শেষে চারু বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করে।
সবশেষে সঞ্চালক সাধারণ সম্পাদক পিএস চুন্নু ও সভাপতি ড. সিরাজুল হক সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এরপর আগত অতিথিদের নৈশভোজে আপ্যায়নের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।