খবর প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ১২:৫৬ এএম
মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসনের নেতৃত্বদানকারী দু'দেশ ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র। আঞ্চলিক এই যুদ্ধ বড় পরিসরে ছড়িয়ে গেলে তা রূপ নিতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে। এতে প্রত্যেকটি দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। এ প্রেক্ষিতে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ ঠেকানোর দায়িত্ব তাই প্রথমতই এই দুই দেশের সরকারের। তারা কোনভাবেই দায়ভার এড়াতে পারে না। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ওপর ভর করে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইহুদি রাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার অবস্থানকে সুসংহত করতে সফল হয়েছেন। তবে এখনই বিশ্ববাসীর কাছে চূড়ান্ত সময় এসেছে যে নেতানিয়াহু এবং তার সমর্থকদের সবাইকে আরও হামলার নেতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
হামাস এবং হিজবুল্লাহর সিনিয়র নেতাদের পরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্টভাবে হত্যা করার পর ইরান সরাসরি সংঘর্ষে জড়াতে বাধ্য হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও তাদের হত্যা করা হয়। স্পষ্টতই, তাদের সামরিক পদধারীর কেউ বিশ্বাসঘাতক রয়েছেন, যারা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং অন্যান্য সংস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করেছে যা হত্যাকাণ্ডকে সহজতর করে দিয়েছে।
ইরানের মধ্যে যা বিপদের ঘণ্টা বাজাচ্ছে তা হলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে প্রতিশোধ নেয়ার সামরিক সক্ষমতা তেহরানের নেই। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া সম্পূর্ণ সুরক্ষামূলক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে তেলআবিবের। ইরানি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনুচরের অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে।
ইসরায়েল যে সফলতা অর্জন করতে পারত তা ইরানি সংস্থার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সক্রিয় সহযোগিতা বা যোগসাজশ ছাড়া সম্ভবপর ছিল না। তারা শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই প্রদান করেনি বরং সম্ভবত সহযোগিতাও করেছিল। এমন তথ্যের সত্যতা প্রমাণ পাওয়া গেলে তা ভীতিকর। এ অবস্থায় ইরানের অনেক শীর্ষ নেতা আত্মগোপনে চলে গেছেন বা তাদের অবস্থান চূড়ান্তভাবে গোপন রেখেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে হামলার সময় মিলে যাওয়ায় ইসরায়েলের জন্য আরও বেশি সহায়ক হয়েছে। দেশটিতে নির্বাচন মাত্র এক মাস বাকি। যুক্তরাষ্ট্রে মনোনীত কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে অপারগ। সেইসঙ্গে তেলআবিবের প্রতিটি পদক্ষেপকে সমর্থন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। অতএব, নেতানিয়াহু এই সব বাড়তি সুযোগ-সুবিধা মাথায় নিজেই এগিয়ে চলেছেন। অনেকে বিশ্বাস করেন যতক্ষণ পর্যন্ত নেতানিয়াহু পদে বহাল থাকবেন, ততদিন পর্যন্ত আগ্রাসন বা বিমানহামলা অব্যাহত থাকবে।
পশ্চিম এশিয়ায় এমন ক্রমবর্ধমান সংঘাতের ফলে ইরান তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তবে ইসরায়েলি হামলায় নারী ও শিশু হত্যার ঘটনায় শুধুমাত্র নিন্দা নয় ইউরোপে এটিকে অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। সেখানে কেউই ইসরায়েলকে কোনো সমর্থন দিচ্ছে না।
ইরানের পক্ষে থাকা দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও চীন খুব মনোযোগ সহকারে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছে। যদি তারা এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তবে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যেতে হবে যা মস্কো-বেইজিং চাইছে না। রাশিয়া এবং চীন উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একক বিশ্বব্যবস্থা পাল্টে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা চাইছে। তবে তারা বিকল্প হিসেবে আলোচনার পথ খোলা রাখার পাশাপাশি পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যস্তবতা বহাল রাখতে চাইছে।
তাইওয়ান ইস্যুতে চীনকে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা থেকে এড়িয়ে যেতে। বেইজিংয়ের অধিকাংশ প্রতিক্রিয়াই ছিল মৌখিক হুমকিতে সীমাবদ্ধ। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, ইরানে চীনের সরাসরি কোন স্বার্থ নেই। তাই ইরান-ইসরায়েল ইস্যুতে চীনের আক্রমণাত্মক অভিযান কল্পনাও করা যায় না।
এদিকে দেখা যায় যে, মুসলিম বিশ্ব প্রধানত সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েল ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর ফলে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটির গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ভয় বলে আর কিছু বাকি রইল না। ইরানের নেতৃত্বে কোন আরব দেশ বা জোট ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র মৈত্রীকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে বলে মনে হয় না। মুসলিম বিশ্ব সর্বোচ্চ যা করতে পারে তা হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত রাখা।
তবে, এর অর্থ এই নয় যে ইসরায়েলকে যে কোনও দেশে নিরস্ত্র জনগণের ওপর আগ্রাসন চালানোর অনুমতি দিয়ে যেতে হবে। আরব নেতাদের এখনই তেলআবিবের লাগাম টেনে ধরার জন্য একটি কার্যকর আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যিনি দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে জিম্মি করে ফেলেছেন।
ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলবে নাকি তার তেল উৎপাদন ক্ষেত্রে হামলা চালাবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। শিয়াপ্রধান দেশটির সামরিক সক্ষমতাকে পঙ্গু করার জন্য ইসরায়েল সেখানে ব্যাপক মাত্রায় বোমা হামলা চালাতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছে। ইসরায়েলের তুলনায় ইরানের সামরিক সক্ষমতা খুবই অপর্যাপ্ত। এটি একটি অসম যুদ্ধ যেখানে ইরান পাল্টা আঘাত করার জন্য তথাকথিক সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে বাধ্য হতে পারে।