পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। পানিতে ডুবে বীরচন্দ্রপুর গ্রামের সুবর্ণা আক্তার নামের এক অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু হয়েছে। এদিকে পানির তোড়ে গাজীর বাজার এলাকায় বেইলি সেতু ধসে পড়ায় গতকাল সকালে আখাউড়া-আগরতলা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন দপ্তরে পানি ওঠায় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য ও যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার বেশ কিছু এলাকার জমি।
জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের চারটি নদীতেই পানি বেড়ে গেছে, যে কারণে সেখানকার একটি বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে তীব্র বেগে পানি প্রবেশ করছে।

আখাউড়ায় আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভেতর ঢুকেছে পানি। ছবি : কালের কণ্ঠ
কুমিল্লা : উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বর্ষণের কারণে গোমতী নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে জেলায় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানিতে কয়েক হাজার হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। জেলার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, বুড়িচং, তিতাসসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান, ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার এক সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
হবিগঞ্জ, মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ : খোয়াই, কুশিয়ারা, কালনী-কুশিয়ারাসহ সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহরের নিচু এলাকা জালালাবাদে বাঁধের পুরনো ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি হাওরে প্রবেশ করায় ঝুঁকিতে রয়েছে জেলা শহর। শহরতলির পশ্চিম ভাদৈ এবং শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার আলাপুর ও লেঞ্জাপাড়া এলাকায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছে।
এ ছাড়া টানা বর্ষণে হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কের বেশ কিছু এলাকা ডুবে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, সার্কিট হাউস, অনন্তপুর, মাহমুদাবাদ, শ্যামলীসহ অনেক এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে মাধবপুর উপজেলায় গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সোনাই নদীর তীরবর্তী এলাকার রোপা আমন ও সবজি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার মৎস্য খামার পানিতে ডুবে মাছ ভেসে গেছে। এক সপ্তাহ ধরে উপজেলায় থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালা : টানা বর্ষণ ও বন্যার কারণে মহালছড়ি উপজেলার সঙ্গে মুবাছড়ি ইউনিয়নের সংযোগ সড়কের কাপ্তাইপাড়া সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক ভেঙে গেছে। ফলে ওই এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এদিকে আবারও প্লাবিত হয়েছে দীঘিনালার নিম্নাঞ্চল। দীঘিনালার সঙ্গে সাজেক ও লংগদুর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে সাজেকে দেড় শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছে। মেরুং, কবাখালী ও বোয়ালখালী (সদর) ইউনিয়নের ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাত শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া : টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জেলার পাঁচ নদ-নদীতে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এতে নদ-নদীর বাঁধ ভাঙনে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রাম। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় জুড়ী নদে বিপৎসীমার প্রায় ১৭৮ সেন্টিমিটার ওপর, ধলাই নদে বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার, মনু নদের চাঁদনীঘাটে ৯০ সেন্টিমিটার ও রেলওয়ে ব্রিজে ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মুহূর্তে পানি বাড়ছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাতে। গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
নোয়াখালী : ফেনীর মুহুরী নদীর পানি ঢুকে পড়ায় এবং বর্ষণ অব্যাহত থাকায় জেলার ৯ উপজেলার ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নতুন করে জেলার অনেক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এদিকে জেলা আবহওয়া অফিস ২৪ ঘণ্টায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। গ্রামীণ সব সড়ক, ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে আছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
লক্ষ্মীপুর : টানা ভারি বর্ষণে লক্ষ্মীপুরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বসতবাড়ি, মাঠ, রাস্তাঘাট, বীজতলা ও ফসলের ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে আছে। একই সঙ্গে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।