খবর প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০১:৫২ পিএম
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যে মনোভাব পোষণ করে, তা সমর্থন করেন না বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। উপরন্তু পুতিনের প্রতি বৈরী মনোভাবের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনাও করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল টিআরটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘পুতিনের প্রতি পশ্চিমা রাজনীতিবিদদের যে দৃষ্টিভঙ্গী ও মনোভাব— তা খুবই নেতিবাচক রাজনীতির প্রকাশ। আদৌ এটি কোনো রাজনৈতিক মনোভাব কিংবা আচরণের পর্যায়েই পড়ে না।’
‘কারণ আমাদের সবসময়ই মনে রাখা উচিত, আমি অন্যের সঙ্গে যে আচরণ করব— অন্যরাও সেই একই আচরণ আমার সঙ্গে করবে।’
বৈঠকে ইউক্রেনের গুদামগুলোতে আটকে থাকা শস্য ছাড়ে রাশিয়া, ইউক্রেন, তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যকার চুক্তির বিষয়টি টানেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, ‘এই চুক্তি স্বাক্ষরের পেছনে আঙ্কারার দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, আলোচনা জড়িয়ে আছে; এবং আঙ্কারা যে এই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করতে পেরেছে, তার প্রধান কারণ— রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই তুরস্কের দীর্ঘদিনের মিত্র এবং উভয়ের কাছেই মিত্র হিসেবে তুরস্ক তার বিশ্বস্ততা ধরে রাখতে পেরেছে।’
‘আমরা আশা করি, ইউক্রেনের আটকে থাকা শস্য বাজারে পৌঁছানো এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র এবং বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের বাজারে যে অগ্নিমূল্য শুরু হয়েছে, তা শিগগিরই নেমে আসবে।’
গত ২২ জুলাই রাশিয়া, তুরস্ক, ইউক্রেন ও জাতিসংঘের মধ্যে ইউক্রেনের শস্য ছাড় বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইউক্রেনে আটকে থাকা শস্য বহনকারী বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ যেন নিরাপদে কৃষ্ণসাগরে চলাচল করতে পারে, সেজন্য তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় একটি যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র খোলা হবে। সেই কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে জাতিসংঘ, রাশিয়া ও তুরস্ক।
জাতিসংঘের পক্ষে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন সর্ববৃহৎ এই বৈশ্বিক সংস্থার মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। রাশিয়া ও তুরস্কের প্রতিনিধি হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হালুসি আকার।
পাশাপাশি ইউক্রেনের বিভিন্ন বন্দর থেকে যেন নিয়মিত শস্যবাহী জাহাজগুলো ছেড়ে যায় তা নিশ্চিত করতে তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হালুসি আকারের সঙ্গে পৃথক এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন ইউক্রেনের অবকাঠামো বিষয়ক মন্ত্রী আলেক্সান্দার কুবরাকভ।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণার দু’দিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
বুধবার ১৫২তম দিনে গড়িয়েছে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের অভিযান। এই চার মাস সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লুহানস্ক, ইউক্রেনের দুই বন্দর শহর খেরসন ও মারিউপোল, দনেতস্ক প্রদেশের শহর লিয়াম, মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার আংশিক এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে।
এই যুদ্ধ শুরুর এক মাসের মধ্যেই রাশিয়া ও ইউক্রেন— উভয় রাষ্ট্রকে নিজেদের মধ্যকার সমস্যা কূটনৈতিক আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের প্রস্তাব দেয় তুরস্ক। রাজধানী আঙ্কারায় দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে শান্তি সংলাপ এখনও চলছে।
এই যুদ্ধে তুরস্ক একদিকে যেমন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা থেকে বিরত থেকেছে, অন্যদিকে তেমনি ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা হিসেবে নিজেদের তৈরি ড্রোন বায়রাকতার টিবি-২ ও পাঠিয়েছে।