’
অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে কমপক্ষে ৩৭ হাজার ৮৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮৪ হাজার ৪৯৪ জন আহত হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেছেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নুসিরাত হামলার বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশন চাইছে।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বলেছে, ইসরায়েলের চার বন্দিকে মুক্তি দেওয়া ‘গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কৌশলগত ব্যর্থতা পরিবর্তন করবে না’, বিশেষ করে এ অভিযান কার্যকর করতে আট মাস সময় নেওয়ার পরে।
যুক্তরাষ্ট্র এই ইসরায়েলি অভিযানে সহায়তা করেছে অভিযোগ করে গোষ্ঠীটি আরো বলেছে, এটি আবারও প্রমাণ করে, ওয়াশিংটন অবরুদ্ধ উপকূলীয় ভূখণ্ডে ‘সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের মতো অবৈধ কাজের সহযোগী ও সম্পূর্ণভাবে জড়িত’।
তার দেশ বন্দিদের মুক্তি ও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানায় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ওআইসি, আরব পার্লামেন্ট
৫৭টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) ‘ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনীর পরিচালিত ভয়াবহ গণহত্যার নিন্দা করেছে, যার ফলে শত শত ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।’ সেই সঙ্গে তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ভূমিকার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তদন্ত, জবাবদিহি ও শাস্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
কায়রোভিত্তিক আরব পার্লামেন্ট ‘ইসরায়েলি দখলদারিত্বের সংঘটিত গণহত্যার’ নিন্দা করেছে এবং ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে।
তুরস্ক
এক বিবৃতিতে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশটি ইসরায়েলি হামলার জন্য ‘দুঃখ প্রকাশ করে’। তারা এ হামলাকে ‘বর্বর’ এবং গাজায় ইসরায়েলের সংঘটিত ‘অপরাধের’ দীর্ঘ তালিকার আরেকটি উদাহরণ বলে অভিহিত করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য দায়ী সংস্থাগুলোকে, বিশেষ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ইসরায়েলের এই অপরাধ বন্ধে দায়িত্ব প্রয়োগের আহ্বান জানায়।
ইরান
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শত শত ফিলিস্তিনিকে সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের জন্য বিশ্ব সরকার এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ‘নিষ্ক্রিয়তার’ জন্য দায়ী করেছে।
মুখপাত্র নাসের কানানি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই ভয়ংকর ও মর্মান্তিক অপরাধগুলো...ইহুদিবাদী শাসকের (ইসরায়েল) আট মাসের যুদ্ধাপরাধ ও লঙ্ঘনের মুখে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ সরকার ও দায়িত্বশীল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তার ফলাফল।’
জর্দান, মিসর
জর্দানের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয় এক্সে এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি আক্রমণ ‘একটি অভ্যাস, যা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের পদ্ধতিগত লক্ষ্যবস্তু, আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনে ইসরায়েলি অধ্যবসায় ও যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে যাওয়াকে প্রতিফলিত করে’।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নুসিরাতে হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সব বিধানের পাশাপাশি মানবতা ও মানবাধিকারের সব মূল্যবোধের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে।
জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, তার সংস্থা এই সপ্তাহে গাজায় জাতিসংঘের ১৮৮ জন কর্মী নিহতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ইসরায়েলি হামলায় ‘অসংখ্য ফিলিস্তিনি বেসামরিক লোক’ নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘের ত্রাণ প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, অবশিষ্ট সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে এবং যুদ্ধ শেষ করতে হবে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিসের সাবেক উপপ্রধান এবং ওসাকা জোগাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবাধিকার ও শান্তি অধ্যয়নের অধ্যাপক সৌল তাকাহাশি আলজাজিরাকে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিষয়ে পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া ‘দ্বৈত মান’ দেখায়।
তাকাহাশি জাপানের তোয়োহাশি থেকে বলেন, ‘মানুষের জীবনের ক্ষেত্রে বিশাল দৈত মান রয়েছে—ইসরায়েলি, ইউক্রেনীয় ও সাদা চামড়ার জীবন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যখন ফিলিস্তিনিদের কথা আসে, বাদামি চামড়ার মানুষ, সাধারণভাবে আরব, তারা ঠিক তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা সত্যিই তাদের নিয়ে চিন্তা করি না।’
অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) দলগুলো আল-আকসা হাসপাতালে কাজ করে। সেখানে শনিবার অধিকাংশ হতাহতদের নেওয়া হয়েছিল। গোষ্ঠীটি সেখানে ওষুধ, জ্বালানি ও খাবার ফুরিয়ে যাওয়ার ‘দুঃস্বপ্নের’ বর্ণনা করেছে।
গাজায় এমএসএফ সমন্বয়কারী স্যামুয়েল জোহান বলেন, ‘বিশ্বনেতারা এই গণহত্যা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আর কত পুরুষ, নারী ও শিশুকে হত্যা করতে হবে?’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর কেনেথ রথ আলজাজিরাকে বলেন, একটি দিনের অভিযানের অর্থ হলো ‘কিছু বোমা স্পষ্টতই নুসিরাতের একটি বাজারের পাশে বা ডান দিকে পড়েছিল, যা লোকে ভরা ছিল। সেই পরিস্থিতিতে অনুমান করা যায়, একটি রাতের অভিযানের চেয়ে বেশিসংখ্যক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটবে। এটি বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়ানোর জন্য সব সম্ভাব্য সতর্কতা অবলম্বন করার দায়িত্বের সঙ্গে অসংগত।’
ইসরায়েল ও তার মিত্রদের প্রশংসা
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, নুসিরাত অভিযান ‘ইতিহাসে লেখা থাকবে’। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী একটি ‘সাহসী’ অভিযানের জন্য তার কমান্ডোদের প্রশংসা করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার বিষয়ে মন্তব্য না করেই জিম্মিদের মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সব জিম্মি ঘরে না আসা পর্যন্ত এবং যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজ বন্ধ করব না। এটা অপরিহার্য।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁও ইসরায়েলের উদ্ধার অভিযানের প্রশংসা করেন এবং গাজা যুদ্ধের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানান। তিনিও বিপুলসংখ্যক বেসামরিক মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেননি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা উপেক্ষা করে জিম্মিদের মুক্তি একটি ‘বিশাল স্বস্তি’।