খুলনা ও সাতক্ষীরায় এক মাস ধরে টিকা সরবরাহ বন্ধ
খুলনায় গত এক মাস (এপ্রিল) ধরে নবজাতক শিশুদের পেন্টাভ্যালেন্ট ও পিসিভি টিকা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বেশ কয়েক মাস আগে থেকে এই সরবরাহে অনিয়ম শুরু হয়।
খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. এস এম কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে কিছু টিকা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’ সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. সুফিয়ান রুস্তম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরেই টিকার সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। গত এপ্রিল মাসে একেবারে সরবরাহ ছিল না।’
চাহিদার তুলনায় কিছুটা কম টিকা পাওয়া যাচ্ছে
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে শিশুদের পেন্টাভ্যালেন্ট ও পিসিভি টিকার কিছুটা সংকট রয়েছে। চাহিদার তুলনায় কিছুটা কম টিকা পাচ্ছি। তবে এতে আমাদের বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। যখনই যেটুকু দরকার আমরা চাহিদা দিচ্ছি, এরপর যেটুকু আসছে সেটুকু মাঠে পাঠিয়ে দিচ্ছি। শিগগিরই টিকার সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।’
ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে পেন্টাভ্যালেন্ট ও পিসিভি টিকার সংকট নেই। তবে টিকা আসতে কখনো কখনো দেরি হয়। আবার কখনো কখনো চাহিদার পুরোটা আসে না। তখন আবার নতুন করে চাহিদা দিতে হয়।’
রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু রশিদ মো. ফারুক বলেন, ‘দেশজুড়েই শিশুদের টিকার সংকট চলছে। রাজশাহীও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে আমাদের হাতে এখনো কিছু টিকা আছে, সেগুলো দিয়ে আরো ১৫-২০ দিন চলবে। আশা করছি, দ্রুতই নতুন টিকা হাতে পাব।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন (ডিপিটি, হেপাটাইটিস-বি এবং হিব ভ্যাকসিন) পাঁচটি টিকার মিশ্রণ, যা ডিফথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টঙ্কার, হেপাটাইটিস-বি এবং হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করে। জন্মের পর ছয় সপ্তাহ বা ৪২ দিন পূর্ণ হলে শিশুকে প্রথম ডোজ পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা দিতে হয়। এরপর ২৮ দিন বা এক মাস পর পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ টিকা দিতে হয়।
পিসিভি (নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন) টিকা নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়াজনিত রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করে। পিসিভি টিকা তরলাকারে থাকে। এটিও জন্মের পর ছয় সপ্তাহ বা ৪২ দিন পূর্ণ হলে শিশুকে প্রথম ডোজ পিসিভি টিকা দিতে হয়। এরপর ২৮ দিন বা এক মাস পর পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ টিকা দিতে হয়।
রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বে-নজির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টিকার দীর্ঘ বিরতি কোনোভাবে কাম্য নয়। কারণ সুরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়লে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে যেতে পারে। যেমন, এ ঘটনা এর আগেও ঘটেছিল চট্টগ্রামে। সেখানে একটি এলাকায় হামের টিকা না দেওয়ার ফলে অনেক শিশু হামে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এ ছাড়া রোহিঙ্গা শিশুরা যখন বাংলাদেশে আসে, তখন ব্যাপক আকারে ডিফথেরিয়া দেখা দেয়। কারণ এসব শিশু মিয়ানমারে বসবাসের সময় টিকা পায়নি।’
ইপিআই কর্মসূচির সাবেক প্রধান তাজুল ইসলাম এ বারি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেড় মাস, আড়াই মাস ও সাড়ে তিন মাস বয়সী শিশুদের এ টিকা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে দেড় মাস কিংবা দুই মাস যদি গ্যাপ পড়ে যায়, তাহলে তেমন সমস্যা নেই। তবে নির্দিষ্ট সময়ে টিকা দেওয়া ভালো। কারণ এতে পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়া যায়। যদি কোনো কারণে দেরিতে টিকা দেওয়া হয় তাহলে অনেক সময় ইনফেকশন হতে পারে।’