খবর প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪, ১২:০২ এএম
যুক্তরাষ্ট্রে লামার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহকারী শেখ আবির হোসেনের, ৩৪, সকল স্বপ্নের ইতি ঘটলো দুর্বৃত্তের গুলিতে। পৃথিবীর অর্ধেকটা পথ পারি দিয়ে আবির এসেছিলেন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্নে। লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করছিলেন একটি দোকানে, হয়তো জীবনটাকে আরও একটু ভালোভাবে পরিচালনার জন্য। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এদেশে এসে সেই সংগ্রামটিই করে যাচ্ছিলেন যা তাকে হয়তো দিতে পারতো আরও সুখের জীবনের সন্ধান। কিন্তু সকল স্বপ্ন শেষ হলো, দুর্বৃত্তের গুলিতে।
টেক্সাসের ক্রিস ফুড মার্ট নামের যে দোকানটিতে আবির কাজ করতেন সেখানেই ঘটে এই ঘটনা। দোকানটির মালিক একজন বাংলাদেশি। শুক্রবার রাত তখন ১০টা দুই দুর্বৃত্ত দোকানটিতে ঢোকে। এবং সিগারেট চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন আবির তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে একজন গুলি চালায়। তার মাথায় ও বুকে গুলি লাগে।
স্থানীয় টিভি চ্যানেল কেএফডিএম'র খবরে বলা হচ্ছিলো, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আবিরকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। আবিরের পরিচিত টেক্সাসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষক ড. রাকিবুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে অন্য কেউ ছিলেন না, তবে পুলিশের কাছ থেকে তারাও একই কথা জেনেছেন।
এ ঘটনায় পুলিশ ১৯ বছরের একজন গ্রেপ্তার করেছে এবং সন্দেহভাজন অপর একজনকে খুঁজছে বলে জানানো হয়েছে কেএফডিএম'র খবরে।
আবিরের স্ত্রী সানজিদা আলম তাঁদের একমাত্র শিশুকন্যা আরশিয়াকে (২) নিয়ে নিউইয়র্কে তাঁর মা–বাবার সঙ্গে বাস করেন। আবির থাকতেন টেক্সাসে।
আবিরের মরদেহ কিভাবে দেশে নেওযা যেতে পারে এ প্রসঙ্গে ড. রকিবুল জানান, তারা সব ধরনের যোগাযোগ সম্পন্ন করেছেন। প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মঙ্গলবার এ ব্যাপারে আটডেট জানা যাবে। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জানাজা রয়েছে। তখনই নিশ্চিত হওয়া যাবে কবে নাগাদ আবীরের মরদেহ দেশে পাঠানো সম্ভব।
ড. রকিলুল জানান, এ জন্য তারা একটি তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। এবং টেক্সাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন এবং সহযোগিতা পাচ্ছেন।
ওদিকে বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় আবীরের মা অপেক্ষায় রয়েছেন কবে দেশে নেওয়া হবে তার সন্তানের মরদেহ। কাঁদতে কাঁদতে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ছেলের মুখটি না দেখে তিনি মরতে চান না, এমন আকুতি করছেন মা আনজুয়ারা বেগম।
যুক্তরাষ্ট্রে পারি দেওয়ার আগে ২০১৪ সালে শেখ আবির হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তিনি।