’গত ২১ ডিসেম্বর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলি ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান লিটুর সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ২২ ডিসেম্বর চনপাড়া বস্তিতে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারের তিন সমর্থককে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে সোনালি আঁশের পোস্টার ও লিফলেট ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনার জন্য গাজীর সমর্থকদের দায়ী করেছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার।
গত ২৩ ডিসেম্বর উপজেলার মুড়াপাড়া এলাকায় নৌকার পক্ষে গণসংযোগ করার সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মাসুম ভূঁইয়া ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে বাড়িঘরের গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হবে। যাঁরা সরকারি বয়স্ক ও বিধবা ভাতা পান, তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ছাত্রলীগ নেতার বক্তব্যের ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
গত ২৫ ডিসেম্বর সোমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষে চনপাড়া বস্তিতে উপজেলার ৩৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় নৌকা প্রতীকের সমর্থক স্থানীয় ইউপি সদস্য শমসের আলীর লোকজন হাসান মাসুদ ও আজিজুল ইসলাম নামের দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর করে এবং অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মন্ত্রীর সমর্থকদের দায়ী করে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে রূপগঞ্জ ও ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
তারাব পৌরসভার একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, বর্তমানে রূপগঞ্জের মানুষ মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থকদের হামলা-ভাঙচুর ও মামলার ভয়ে আতঙ্কিত। মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এমদাদুল হক ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে অন্য প্রার্থীদের পক্ষে যারা কাজ করছে তাদের সামনে অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বিএনপির কিছু সাধারণ কর্মী নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন, এমন ধারণা থেকে এ পর্যন্ত স্থানীয় বিএনপির ৩৪ নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে উপজেলার পাঁচ শতাধিক কর্মী বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র থাকছেন বলে দাবি করেন তাঁরা।
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব ও ওই আসনের প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, নৌকা প্রতীকের সমর্থক ও সরকারি দলের লোকজন যেভাবে অস্ত্র প্রদর্শনসহ ধারাবাহিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে ভাঙচুর-লুটপাট, পোস্টার-লিফলেট ছিঁড়ে ফেলা এবং ভোটারদের নৌকায় সিল মারার জন্য প্রকাশ্যে চাপ দিচ্ছে, তাতে ভয়-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো নির্বাচনী এলাকায়। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচনে ভোটাররা উপস্থিত হবেন না এবং সুষ্ঠু নির্বাচনও সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটির বাস্তবায়ন রূপগঞ্জে হবে বলে মনে হয় না। নির্বাচন কমিশনের উচিত, দ্রুত এই আসনে নির্বাচনী পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মন্ত্রী হিসেবে প্রভাব বিস্তার করে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন। তিনি কালো টাকা ছড়িয়ে সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে পুরো উপজেলায় আমার কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘরে ধারাবাহিকভাবে হামলা-ভাঙচুর করছেন। সারা জীবন আওয়ামী লীগ করেও দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। নেতাকর্মীদের অপরাধ, তাঁরা কেন আমাকে সমর্থন করছেন।’ তিনি বলেন, ‘নিশ্চিত পরাজয় জেনে নৌকার প্রার্থী পুরো উপজেলায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ভোটার উপস্থিতি কমিয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে সিল মেরে জয়ী হতে চান। বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও সরকারের উচ্চ মহলকে আমি অবগত করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।’
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবীর হোসেন বলেন, রূপগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ উপস্থিত হয়ে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে নির্বাচনী পরিবেশ শান্ত রাখতে অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।