চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধনের ১৭ দিন পর আজ মঙ্গলবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হচ্ছে। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে নগরীর টাইগারপাস পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করবেন।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এই প্রকল্পটি পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়েছে। কোনো বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়নি।
বর্তমান সরকারের আমলে চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়কে তিনটিসহ মোট চারটি উড়াল সেতু-ওভারপাস চালুর পর এবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হতে যাচ্ছে। এটি এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ উড়ালপথ।
‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ ফ্লাইওভার’ নামে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ করা হয়েছে। মূল এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৫.১১ কিলোমিটার।
এটি সাড়ে ১৬ মিটার প্রস্থের চার লেনের সড়ক। উদ্বোধনের পর এক্সপ্রেসওয়েতে দু-তিন ঘণ্টা যানবাহন চলাচল করতে পারবে। পুরোপুরি যান চলাচল শুরু হতে আরো দুই মাসের মতো অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মূল সড়কের অবশিষ্ট অংশ নগরের টাইগারপাস থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত (এক কিলোমিটারের একটু বেশি) নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর আগামী মাসের শেষ দিকে অথবা জানুয়ারির প্রথম দিকে মূল এক্সপ্রেসওয়েতে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
সিডিএর এক্সপ্রেসওয়ে ও দুটি সড়ক ছাড়াও আজ আরো আটটি প্রতিষ্ঠানের ১২টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও একটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এক্সপ্রেসওয়ে বাদে সিডিএর অন্য দুটি প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা সড়ক ও সিরাজউদ্দৌলা সড়ক থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক প্রকল্প জানে আলম দোভাষের নামে অনুমোদিত হয়েছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোট ১৪টি র্যাম্প নির্মাণ করা হবে। এসব র্যাম্পের মোট দৈর্ঘ্য ৫.৬৪ কিলোমিটার। মূল এক্সপ্রেসওয়ে ও ১৪টি র্যাম্প মিলে এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ২০.৭৫ কিলোমিটার। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) কর্মকর্তারা জানান, মূল এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ১৪টি র্যাম্পের নির্মাণ শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, র্যাম্প ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেস চালু হলেও এর আংশিক সুফল মিলবে। র্যাম্প চালু হলে পুরো সুফল মিলবে। গণপরিবহনের জন্য টোল সহনীয় পর্যায়ে রাখা হলে নগরের যানজট অনেক কমে আসবে।
সিডিএ থেকে জানা যায়, ঢাকার মতো চট্টগ্রামের এই এক্সপ্রেসওয়েতেও টোল দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। তবে এখনো টোলের হার নির্ধারণ করা হয়নি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নগরের লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেতে যানজটের কারণে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগে। আবার অনেক সময় এর চেয়েও বেশি লাগে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট।’
যান চলাচল কখন শুরু হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাইগারপাস থেকে লালখানবাজার অংশে এক কিলোমিটার এলাকায় মূল ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হওয়ার পর সিসিটিভি, লাইটিংসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজ করতে হবে। ডিসেম্বরের শেষে কিংবা জানুয়ারির প্রথম দিকে তা খুলে দেওয়া হবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসে ৮ সুফল
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হলে আটটি ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে নগরবাসী।
সিডিএ কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হওয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে শহরের নতুন রোড নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে অবস্থিত সিইপিজেড, কেইপিজেডের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হওয়ায় শহরের ভেতরে যানজট কমবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ২০ মিনিটে যাত্রীরা বিমানবন্দরে যেতে পারবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের যানজট সমস্যা কমবে। মানুষের প্রতিদিনের যাতায়াতের সময় সাশ্রয় হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়বে। যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন।