জাকার্তা, ঢাকা ও নয়াদিল্লি সফর প্রসঙ্গে রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী রুদেনকো বলেন, ‘অবশ্য আমাদের সামনে বড় অনুষ্ঠান ও চ্যালেঞ্জ আছে। তবে আমরা সেগুলো সফলভাবে মোকাবেলায় প্রস্তুত। এর পাশাপাশি এশিয়াকে আমাদের অনেক কিছু দেওয়ার আছে। আর এশিয়ারও আমাদেরকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে।’
পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ওই দেশগুলোতে লাভরভের কোনো সম্পদ থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করার কথা বলা হয়। সেই নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে।
ঢাকায় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কর্মসূচি
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ঢাকায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টারও কম সময় অবস্থান করবেন। জাকার্তা থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় আসবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
আগামীকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় একটি হোটেলে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সামরিক খাতে সহযোগিতায় চারটিসহ ২০টি চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে এবারের সফরে চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরের সম্ভাবনা কম।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেদিনই নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে রাশিয়ায় পড়ালেখা করা বাংলাদেশের সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লাভরভের মতবিনিময়ের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের নিরপেক্ষ অবস্থানের আশা রাশিয়ার
রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে রুদেনকোর উপস্থিতিতে গত সোমবার ভালদাই ইন্টারন্যাশনাল ডিসকাশান ক্লাবে আলোচনায় বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ অবস্থান এবং এ থেকে রাশিয়ার প্রত্যাশা ফুটে উঠেছে। ওই ক্লাবের এক প্রকাশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কোনো বিশেষ বলয় বা জোটের সঙ্গে নেই। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ অভিযানেও বাংলাদেশের জোটনিরপেক্ষ অবস্থান বা ঢাকার আচরণ বদলায়নি। রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্কের পাশাপাশি চীনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক আছে বাংলাদেশের। এটি বাংলাদেশকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে এবং রাশিয়ার নিন্দা জানানো থেকে বিরতে থাকা এবং আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষকে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানাতে বাধ্য করছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তাবে নিরপেক্ষ ভূমিকা বাংলাদেশের
ভালদাই ডিসকাশান ক্লাবের প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জরুরি অধিবেশন ভোটাভুটিতে অন্তত চারবার বাংলাদেশ প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান না নিয়ে ‘অ্যাবস্টেনশান’ ভোট দিয়েছে। তবে ইউক্রেনের অখণ্ডতা রক্ষার বিষয়ে একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। এর ব্যাখ্যা হিসেবে রুশ প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, প্রবল চাপের মুখে বাংলাদেশ ওই অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে।
এ ছাড়া গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার ঘটনা এবং পরবর্তী সময়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় থাকা কোনো জাহাজ বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্তও স্থান পেয়েছে ওই প্রকাশনায়। এ বিষয়ে রুশ প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ সহযোগিতা পায়। এ কারণে পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় থাকা জাহাজ ভিড়তে দিলে বাংলাদেশেরও নিষেধাজ্ঞার শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
জ্বালানি খাতে সহযোগিতার সুযোগ
ভালদাই ইন্টারন্যাশনাল ডিসকাশান ক্লাবের প্রকাশনায় রাশিয়ার সহায়তায় বাংলাদেশে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ সস্তায় জ্বালানি তেল কিনতে চায়। এ ছাড়া বাণিজ্যের বিষয়েও বাংলাদেশের আগ্রহ আছে।
রোহিঙ্গা সংকট
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় রাশিয়ার সহযোগিতা চেয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে। আগামীকাল ঢাকায় বাংলাদেশ ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আলোচনা হতে পারে।
ইউক্রেন সংকটের সমাধান চাইবে ঢাকা
লাভরভের ঢাকা সফরে ইউক্রেন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করার জন্য অনুরোধ করবে ঢাকা। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে যেসব জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটের পর থেকে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। দ্রুত যেন শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করে সে জন্য আমরা রাশিয়াকে অনুরোধ করতে পারি।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে খাদ্য, সার ও ফুয়েলের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের যে সমস্যা আছে আমরা তা তুলে ধরব।’
জোরালো সম্পর্ক প্রকাশে ঝুঁকি
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক পশ্চিমা দেশগুলোর অজানা নয়। ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেভাবে একাট্টা হয়ে নেমেছে, সেখানে রাশিয়ার সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক প্রকাশে বড় ধরনের ঝুঁকিও রয়েছে।