খবর প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারী, ২০২৪, ১১:৪১ এএম
বিশ্বজিৎ মন্ডল, চিতলমারী প্রতিনিধি:
প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে চলছে বর্ষা মৌসুম। এই মৌসুমে বৃষ্টি যেমন প্রকৃতিতে সূচি শুদ্ধতা দিয়ে আসে তেমনি বর্ষার অলংকার হিসেবে কদমফুল তার আপন মহিমায় নিজেকে সৌন্দর্যের সবটুকু দিয়ে মেলে ধরে। ষড়ঋতুর এ দেশে আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষা ঋতু। কিন্তু দিন দিন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা বর্ষার স্মারক কদম ফুল। চিতলমারীর গ্রামের সর্বত্রই বর্ষার আগমনীতে নিজেদের মেলে ধরতো আপন মহিমায় কদম ফুল।
কিন্তু কদম গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কদম ফুল না ফুটলে যেন বৃষ্টি ঝরে না, যে কদমকে নিয়ে এতো কিছু আষাঢ়ের বার্তবাহক সেই প্রিয় ফুলের গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। কদম এখন যেন একটি দুর্লভ ফুলের নাম। কদমের শুভ্ররাগে হৃদয় রাঙিয়ে নেয়ার সুযোগ এখানকার কম মানুষেরই আছে।
চিতলমারীতে হারিয়ে যাচ্ছে সেই বর্ষা মৌসুমের চিরচেনা কদম। কদম ফুলকে বলা হয়ে থাকে বর্ষার বিশ্বস্ত দূত। কাঠফাঁটা রোদের গরমের পর বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদমফুলের উপস্থিতি। বর্ষা মানে কদমফুলের মতই তুলতুলে নরম বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দের ধ্বনি।
বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক পঙ্কজ মন্ডল বলেন, মূলত কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। কদম্ব মানে হলো যা বিরহীকে দুঃখী করে। বৃত্তপুষ্প, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভী, মেঘাগমপ্রিয়, মঞ্জুকেশিনী, কর্ণপূরক, পুলকি এসবও কদম ফুলের নাম। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে। গীতাতেও আছে কদম ফুলের সরব উপস্থিতি।
বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও লেখক বাবু মুকুলেশ ঢালী বলেন, কদম ফুল শুধু বর্ষায় প্রকৃতির হাসি নয়, এর রয়েছে নানা উপকারিতা। কদম গাছের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কদম গাছের কাঠ দিয়ে দিয়াশলাই তৈরি করা হয়ে থাকে। তাই কদম ছাড়া বর্ষা বেমানান। বর্ষায় প্রকৃতির সতেজ-সজীব রূপ-রস যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয় জয় করে এসেছে। প্রকৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অন্য গাছের পাশাপাশি কদম গাছ রোপণ করা প্রয়োজন।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, মানুষ আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক সৌদর্য্যকে ভুলে কৃত্রিম সৌন্দর্য তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বাঙালি সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় গাছগাছালি ও ফল-ফুল। লাভের অংকের হিসেব মেলানোর জন্য মানুষ আর তার বাড়ির আঙিনায় কদম ফুলের গাছ লাগাতে চাইছে না। ‘কদমথ গাছের জায়গায় এখন তারা মেহোগনি, রেইন্ট্রিসহ নানান দামি দামি কাঠের গাছ রোপণে করছেন। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে পরিবেশ বিপর্যেয়র এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য সরকার পাশাপাশি সামাজিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।