খবর প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারী, ২০২৪, ০২:০১ এএম
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপানের সমন্বয়ে গঠিত) টিমের সাথে বৈঠকে অনীহা প্রকাশ করে বিএনপি আন্দোলনের নামে ভাঙচুর ও রাস্তায় বিক্ষোভের নামে জনজীবনকে দুর্বিসহ করার ঘটনায় লিপ্ত হয়। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপির এহেন মনোভাব কতটা সহায়ক বলে মনে করছে জাতিসংঘ-এমন প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংকালে ৮ আগস্ট মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনকে উৎসাহিত করবো। প্রতিবাদ সমাবেশের ব্যাপারে, বিশ্বের যে কোন স্থানেই হউক না কেন, আমরা চাই সকল দেশের নিরাপত্তা বাহিনী শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ এবং সমাবেশকারীদের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে এবং এ ধরনের সমাবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।
প্রশ্নটি ছিল, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর করছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ তাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে। তবে সফরকারী পর্যবেক্ষক টিমের সাথে বৈঠকে বসতে অনীহা প্রকাশ করেছে বিএনপি। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির চলমান ভাঙচুর ও রাস্তায় বিক্ষোভের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়-যা ঢাকার মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এই পরিস্থিতি পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ কি মনে করে যে, বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপির মনোভাব সহায়ক?
৭ আগস্ট সোমবারের ব্রিফিংয়েও বাংলাদেশ প্রতিদিন মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের স্ববিরোধী অবস্থানের প্রসঙ্গ অবতারণা করে। জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরীকে আশ্রয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ঘাতক রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়ার ইস্যুটির নিষ্পত্তি ঘটতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্যদিয়ে।
ফারহান হক বলেন, আমি মনে করছি এটি দ্বি-পাক্ষিক ইস্যু, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা যেতে পারে। এ সম্পর্কিত প্রশ্নটি ছিল, আগস্ট মাস বাংলাদেশের জনগণের জন্য শোকের মাস। কারণ এ মাসেই বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছে বাঙালিরা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে ঢাকার বাসভবনে নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একজন রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত রাশেদ চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারের বার বার অনুরোধের পরও যুক্তরাষ্ট্র রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন রেসপন্স করেনি। অভিযোগ রয়েছে, একজন খুনিকে আশ্রয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙঘন করছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের কোন বক্তব্য বা প্রতিক্রিয়া আছে কিনা।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের আরেকটি প্রশ্ন ছিল, বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় আগামী ১৮ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হবে ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকসমূহ। এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি সভা হলো এসডিজি সামিট’ যা আগামী ১৮-১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বের সকল দেশের সর্বোচ্চ প্রতিনিধিরা সেখানে অংশগ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করা যাচ্ছে। এই সামিটের একটা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো জাতিসংঘ উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন দেশের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে কিভাবে আরো ত্বরান্বিত করা যায় সে বিষয়ে বিশদ দিক নির্দেশনা প্রদান করা।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ জাতিসংঘ উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রার বিভিন্ন সূচক যেমন ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরীকরণ, শিক্ষার গুণগতমানের উন্নয়ন, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান প্রভৃতি অর্জনে ইতোমধ্যে প্রশংসনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে। যেসকল দেশ এ সকল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে আছে,আসন্ন এসডিজি সামিট বা সামিট পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘ তাদেরকে পুরস্কার প্রদানের পরিকল্পনা করছে কিনা, যাতে অন্যান্য দেশ উৎসাহিত বোধ করে-এমন প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, খুবই ভালো, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য তথা এসডিজি সামিট শুরু হউক; তখন দেখা যাবে কীভাবে আমরা এ বিষয়টির বাস্তবায়ন ঘটাতে পারি। তবে অবশ্যই আমি বিষয়টি ক্লিয়ার করতে চাই যে, অংশগ্রহণকারী সকলের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী উত্থাপিত প্রস্তাবের আলোকে কিছু করার কথা ভাববো।