খবর প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারী, ২০২৪, ১১:৪২ এএম
রংপুর বিভাগে বেড়েই চলছে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা। গত ১৭ মাসে বিভাগের সড়ক-মহাসড়কে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩০ জন। আহত তিন শতাধিকের বেশি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল। বেপরোয়া গাড়ি চালানো রোধসহ দুর্ঘটনা এড়াতে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাইছেন তারা।
পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত রংপুর বিভাগের আট জেলার সড়ক-মহাসড়কে এসব দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়। এর মধ্যে বাস দুর্ঘটনায় ১৬০, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৩ ও ট্রাক দুর্ঘটনায় ১৩০ জন নিহত হন। দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে দিনাজপুরে। এরপরই রংপুর জেলার অবস্থান। এই সময়ে ৬০ হাজার মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করেছে পুলিশ।
পুলিশ রংপুর রেঞ্জ কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় বছরে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ৩৪৫টি ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে ২০২১ সালে রংপুর জেলায় ৬২ জন নিহত হন, যার ২২ জনই মোটরসাইকেলে। দিনাজপুরে ৬৯ জন নিহত, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে ৩০ জন। গাইবান্ধায় নিহত ৪০ জন, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে ১২ জন। নীলফামারীতে ২১ জন নিহত, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে ছয় জন। লালমনিরহাটে নিহত ২২ জন, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে পাঁচ জন। কুড়িগ্রামে নিহত ১৫ জন, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে তিন জন। ঠাকুরগাঁওয়ে নিহত ২৫ জন, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে ১২ জন। পঞ্চগড়ে নিহত ২০ জনের মধ্যে মোটরসাইকেলে ১১ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
এদিকে ২০২২ সালের মে পর্যন্ত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নয় জনের মৃত্যু হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। দিনাজপুরে নিহত ৭৫ জন, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে ১৫ জন। গাইবান্ধায় নিহত ১৫ জন, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে ছয় জন। নীলফামারীতে নিহত ছয় জন, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে দুই জন। লালমনিরহাটে নিহত পাঁচ জন, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে দুই জন। কুড়িগ্রামে নিহত তিন জন, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে এক জন। ঠাকুরগাঁওয়ে নিহত ১০ জন, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে চার জন। আর পঞ্চগড়ে নিহত ১২ জন, এর মধ্যে মোটরসাইকেলে তিন জন।
রংপুর সদরের পাগলাপীর শলেয়াহ বাজার এলাকার মহিউদ্দিন মখদূমী জানান, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে প্রাণহানি। অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হচ্ছে। গত কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিজের বাবাকেও হারিয়েছেন মহিউদ্দিন মখদূমী।
তারাগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী বিপ্লব হোসেন অপু বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গাড়িচালকসহ জনগণকে সচেতন হতে হবে। তা নাহলে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। প্রায়ই তারাগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পাগলাপীর এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। এর অন্যতম কারণ ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন এবং গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতা।
মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ী বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আখতারুল বাশার জানান, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে তা সত্যি খুবই উদ্বেগজনক। এজন্য শুধু চালকরাই দায়ী নয়। আমাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা এবং ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশেরও ব্যর্থতা রয়েছে।
রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর এলাকার ট্রাকচালক আব্দুস সালাম জানান, ওভারটেকিং থামাতে হবে। সেই সঙ্গে মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ করতে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।