ঢাকা: দ্রুতই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সংসদকে জানিয়েছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি জানিয়েছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোধ বা গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়নি। সাইবার অপরাধ দমনের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য অর্জনে আইনটি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
আজ সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। সরকারি দলের সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে মন্ত্রী আরো জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার যাতে না হয়, সেজন্য সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে একটি টেকনিক্যাল নোট দিয়েছে। সেটির পর্যালোচনাও প্রায় শেষ।
দ্রুতই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সরকারি দলের মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, 'নিরস্ত্র, নিরীহ মানুষকে হত্যাকারী জঙ্গিদের বিচারাধীন মামলা দ্রুত বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। গত ৩১ মে পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৬৪৫টি।'
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙার প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, 'বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের বিধি অনুযায়ী, সাব রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বিষয়াদি আইন মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত।
ফলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও সাব-রেজিস্ট্রার পদ নিবন্ধন অধিদপ্তরের আওতায় থাকাই যৌক্তিক। সাব-রেজিস্ট্রার পদগুলো আইন ও বিচার বিভাগ থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের নেই। রেজিস্ট্রশন সংক্রান্ত বিষয় আইন ও বিচার বিভাগের আওতাধীন থাকার ব্যাপারটি নিষ্পত্তিকৃত বিষয়।'
আনিসুল হক বলেন, 'সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসকে স্ব স্ব প্রশাসনিক এখতিয়ারের মধ্যে রেখে এরইমধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ২০২১ সালের ১০ জুন থেকে ২০২৩ সালের ১৩ জুন পর্যন্ত ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ৭৮ হাজার ১৯৫টি দলিল ই-রেজিস্ট্রশন সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়েছে।
এর ফলে ভূমি শ্রেণি পরিবর্তন ও জাল খতিয়ানের মাধ্যমে দলিল নিবন্ধন বন্ধ হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা কমেছে। স্বল্প সময়ে ও কম খরচে মানসন্মত সেবা নিশ্চিত হয়েছে।'
সরকারি দলের হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, 'সারা দেশের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে কর্মরত নকলনবিশের সংখ্যা ১৬ হাজার ৪৫৬ জন। বর্তমানে কর্মরত বেশিরভাগ নকলনবিশ তালিকাভুক্ত আছেন। অবশিষ্ট অ-তালিকাভুক্ত নকলনবিশদের তালিকাভুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।' নকলনবিশদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
একই দলের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, 'সারা দেশে (৩১ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত) এসিড নিক্ষেপ সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৭৬টি। এসিড নিক্ষেপ সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলা সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ৪০টি। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলায় এসিড নিক্ষেপ সংক্রান্ত বিচারাধীন কোনো মামলা নেই।' এসিড নিক্ষেপ সংক্রান্ত মামলাগুলো বিচারকরা দ্রুত নিষ্পত্তি করে থাকেন বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের এম আব্দুল লতিফের লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে বর্তমানে মোট ৫৩টি পদ শূন্য রয়েছে। তার মধ্যে নবম থেকে তদূর্ধ্ব গ্রেডের ৬টি, দশম গ্রেডের ৫টি, ১১-১৯তম গ্রেডের ২৩টি এবং ২০তম গ্রেডের ১৯টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদের মধ্যে নবম তদূর্ধ্ব গ্রেডের শূন্য পদগুলো শিগগিরই প্রেষণে পদায়নের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। ১০ম গ্রেডের পদসমূহে পদোন্নতি দেওয়ার প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ১১-২০তম গ্রেডের ২৯টি শূন্য পদ পূরণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে।