নিউইয়র্কের স্কুলগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মা-বাবা উভয়ের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর স্কুল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া উচিত। এতে শিক্ষক ও গাইডেন্স কাউন্সিলররা জরুরি বা প্রয়োজনীয় সময়ে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সঠিকভাবে ফোন নম্বর না দেওয়ার কারণে অনেক সময় স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। ফলে প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য জানা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়। এ ছাড়া কনট্রাক্ট পারসন হিসেবে একজনের নাম ও ফোন নম্বর দিলে অন্যজনের নাম ও ফোন নম্বর স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে থাকে না। এতে অনেক সময় সন্তান কঠিন বিপদেরও মুখোমুখি হতে পারে। কারণ কিছু কিছু পরিবারে দেখা যায়, বাবা-মা সেপারেশনে চলে যান অথবা তারা ডিভোর্সের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর অনেক বাবা তার সন্তানের স্কুল থেকে ফোন এলেও পিকআপ করেন না। ফলে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় মেসেজটি শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে পৌঁছাতে পারে না। আবার অনেক সময় মা-বাবা ফোন নম্বর পরিবর্তন করে ফেলেন। কিন্তু স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর আপডেট করেন না। এ কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীর মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট এডুকেশন থেকে এ ধরনের কিছু সন্তানকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের বাবাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও স্কুল কর্তৃপক্ষ পাচ্ছে না। বাংলাদেশি কমিউনিটির একজন লিডারের সঙ্গে এ ব্যাপারে তারা যোগাযোগও করেছে। ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে, কিছু কিছু সন্তান তাদের বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের কারণে ভীষণ মর্মাহত। তারা বাস্তব অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। তারা মানসিকভাবে অনেক কষ্টে থাকে। কিন্তু এই কষ্ট তারা কারো সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না। এতে তাদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটে এবং হোমওয়ার্কও নিয়মিত করে না। ফলে রেজাল্টের ওপরও এর প্রভাব পড়তে থাকে। এ অবস্থায় স্কুলের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর ফাইলে থাকা বাবা-মায়ের নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেবল বাবা বা মা যেকোনো একজনের ফোন নম্বর ফাইলে রক্ষিত আছে। এ ধরনের বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হলে কিংবা ফোন নম্বর পরিবর্তন হলে স্কুল থেকে আর যোগাযোগের সুযোগ থাকে না। শিক্ষার্থীদের কাছে স্কুল কর্তৃপক্ষ বাবা-মাকে চিঠি দিলেও তারা হতাশা এবং সংসারে আরো অশান্তি হতে পারে সেই ভয়ে চিঠি বাসায় দেখায় না। ফলে মা জানতে পারেন না তার সন্তানের জন্য স্কুল থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কমিউনিটি লিডার মাজেদা উদ্দিন বলেন, নিউইয়র্কের ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন থেকে আমার সাথে বিষয়টি নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, পাঁচটি বরোতে এ ধরনের সমস্যায় যেসব শিক্ষার্থী রয়েছে, তাদের পরিবার এবং সচেতন প্যারেন্ট ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য ইতিমধ্যে আমি ব্রুকলিনে একটি অনুষ্ঠান করেছি। সেখানে ৭১ জন অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। বাকি বরোগুলোতেও আমি অনুষ্ঠান করব।
তিনি বলেন, আমার পরিচিত এক ব্যক্তির তার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। বিচ্ছেদের আগে সন্তানের স্কুলে যোগাযোগের জন্য তার (বাবা) নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর ছিল। বিচ্ছেদের পর তিনি স্কুল থেকে ফোন এলে ধরতেন না। পরে তিনি ফোন নম্বরটিই পরিবর্তন করে ফেলেন। ফলে স্কুল কোনোভাবেই তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। এদিকে মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে দিন দিন ওই শিক্ষার্থীর মানসিক চাপ বাড়তে থাকে। ফলে সে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হতে থকে। হোমওয়ার্কও নিয়মিত করে না। স্কুল টিচারসহ অন্যরা তার অভিভাবকের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে। স্কুলে মায়ের নাম না দেওয়ায় মায়ের সাথেও যোগাযোগ করার সুযোগ ছিল না। ফলে ওই সন্তানকে অনেক মানসিক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।
মাজেদা উদ্দিন আরো বলেন, দিন যত যাচ্ছে পারিবারিক সহিংসতা ও বিচ্ছেদের বিষয়গুলো তত সামনে আছে। করোনার সময়ে এবং এর পরেও পারিবারিক বিরোধ অনেক বেড়েছে। যেসব পরিবারে সমস্যা আছে, সেসব পরিবারে বাবা-মায়ের ঝগড়াঝাঁটি ও বিরোধের শিকার হচ্ছে সন্তানেরা। এ জন্য সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করার সময় বাবা-মায়ের উচিত দুজনেরই নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেওয়া, যাতে কোনো কারণে একজনকে না পেলে আরেকজনের সাথে স্কুল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করতে পারে।