চীনে সাধারণ জনগণকে নির্যাতনের অভিযোগে ৭ কোভিডকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ শ্যানডংয়ের লিনিয়ি শহর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
বিভিন্ন চীনা সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগী হিসেবে প্রায় ১০০ জন শনাক্ত হওয়ার পর সম্প্রতি লকডাউন জারি করা হয়েছে লিনিয়ি শহরে। সোমবার শহরের কয়েকটি এলাকায় লোকজন লকডাউন অমান্য করে বাড়ির বাইরে বের হওয়ায় তাদের অনেককে পিটিয়ে গাড়িতে তোলেন কোভিডকর্মীরা। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ লোকজনকে কোভিডকর্মীদের পেটানো ও গাড়িতে তোলার দৃশ্য ভাইরাল হয়ে যায়। সেসব ভিডিওচিত্র পর্যবেক্ষণ করে অভিযুক্ত ৭ কোভিডকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
করোনার বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করে ‘জিরো কোভিড’ নীতি নিয়েছে চীনের সরকার, কিন্তু এই নীতির কারণে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দেশটির জনগণেকে।
এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন, ব্যাপকমাত্রায় করোনা টেস্ট, ভ্রমণ বিধিনিষেধ ও কোয়ারেন্টাইনের কড়াকড়ির প্রভাবে দেশটির অর্থনীতিরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বহু কোম্পানি ইতোমধ্যে চীন থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া শুরু করেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটিতেই প্রথম শনাক্ত হয়েছিল প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।
তবে শুরু থেকেই এ রোগটি প্রতিরোধে সরকারের ব্যাপক তৎপরতার কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় চীনে করোনা সংক্রমণ ও কোভিডজনিত অসুস্থতায় মৃত্যুর সংখ্যা এখনও অনেক কম।
মহামারির দুই বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর বিশ্বের অধিকাংশ দেশ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া থেকে সরে এলেও চীন এখনও দৃঢ়ভাবে তার আগের অবস্থান ধরে রেখেছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ‘সন্তোষজনকভাবে’ হ্রাসের আগ পর্যন্ত এই নীতি জারি থাকবে। চীন সরকারের এই নীতিই পরিচিতি পেয়েছে ‘জিরো কোভিড’ নীতি নামে।
দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বছর মার্চে চীনের পার্লামেন্টের বার্ষিক অধিবেশন শুরু হবে। তার আগ পর্যন্ত জিরো কোভিড নীতি থেকে সরে আসার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।