ইরানে চলমান হিজাববিরোধী আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টার অভিযোগে দেশটির ওপর নতুন একপ্রস্থ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপ মহাদেশভুক্ত দেশসমূহের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ইইউ’র প্রভাবশালী সদস্যরাষ্ট্র জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানেলিনা বেয়ারবক।

পশ্চিম ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গে ইইউ’র সদস্যরাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে। সোমবার সেই বৈঠকে যোগ দিতে দেশটির রাজধানী লুক্সেমবার্গ সিটিতে গিয়েছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সেখানে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন দমনের নামে যারা ইরানের নারী, পুরুষ ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। এছাড়া দেশটির নৈতিকতা পুলিশকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’

ঠিকমতো হিজাব না পরা ও গায়ে বোরকা না থাকায় গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ২২ বছরের তরুণী মাশা আমিনি। তারপর পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয় তাকে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার চার দিনের মাথায় মৃত্যু হয় মাশা আমিনির।

মাশা’র পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ— নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের কারণেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি তার মৃত্যুর জন্য নৈতিকতা পুলিশ সদস্যদের দায়ী করেন পরিবারের সদস্যরা।

মাশা আমিনিকে আটক করে হেফাজতে নিয়ে যাওয়া নৈতিকতা পুলিশ সদস্যদের অবশ্য ইতোমধ্যে আইনের আওতায় এনেছে ইরানের ইসলামপন্থী সরকার। তবে মাশার মৃত্যু সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়াই মাশার মৃত্যুর কারণ।

এদিকে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাশার মৃত্যুর দিন থেকেই রাজধানী তেহরান ও ইরানের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কুর্দিস্তানে। তারপর অত্যন্ত দ্রুত দেশটির ছোট বড় প্রায় সব শহরে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। শুরুর দিকে বিক্ষোভকারীরা ইরানের নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিলেও অচিরেই তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে মোড় নেয়।

ইরানের ইসলামপন্থী সরকারও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এই বিক্ষোভ দমনের। শুরু থেকেই রাজধানী তেহরানসহ সব শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘাত হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি-রাবার বুলেট, জলকামানের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।