হাড়হিম করা ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গে। প্রথমে নৃশংসভাবে নিজের বাবা-মাকে হত্যা। এরপর মসজিদে গিয়ে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা। এতে আহত হয় চারজন। এই ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এরই মধ্যে অভিযুক্ত হুমায়ুন কবীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত বুধবার (২৮ মে) ভোরে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমানের মেমারি শহরের কাশিয়ারা কাজীপাড়া এলাকায় জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। ছেলের হাতেই খুন হন বৃদ্ধ বাবা-মা। গলার নলি কাটা অবস্থায় বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, নিহত দম্পতির নাম মুস্তাফিজুর রহমান (৬৬) ও মমতাজ পারভিন (৫৬)। তাদের সঙ্গেই থাকতেন ছেলে হুমায়ূন কবীর। ওই ঘটনার পর থেকে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। ফলে সন্দেহের তীর গিয়ে পড়ে ছেলের দিকে। তদন্তে নামে মেমারি থানার পুলিশ। ঠিক কী কারণে বাবা-মাকে খুন করল তার উত্তর খোঁজা শুরু করে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, ঘরে খুন করে লাশ দুটি টানতে টানতে বাড়ির বাইরে রাস্তায় নিয়ে আসে আততায়ী। বুধবার ২৮মে সকালে স্থানীয়রাই প্রথম রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান গলার নলি কাটা অবস্থায় রক্তাক্ত স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ পড়ে আছে। এরপর স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার অর্ক ব্যানার্জিও। মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়।
পরে বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যায় অভিযুক্ত হুমায়ূন কবীর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ থানার অন্তর্গত মতিগঞ্জ এলাকায় একটি মসজিদের প্রবেশ করে বেশ কয়েকজনের ওপর ছুরি নিয়ে আক্রমণ করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হামলার ঘটনায় কমপক্ষে চারজন আহত হন।
এই ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যায় বনগাঁ থানার পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছান বনগাঁ পুলিশ জেলার সুপার (এসপি) দীনেশ কুমার। আহত ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বনগাঁ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সে সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে পুরো ঘটনা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত।
এদিকে আটক ব্যক্তির খবর পেয়েই ওই মসজিদ থেকে অন্তত কয়েকশো মানুষ থানায় এসে হুমায়ূন কবীরকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে। পাশাপাশি থানায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। একসময় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় থানা চত্বর। পরে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে লাঠিপেটা করতে বাধ্য হয় পুলিশ। এই ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রাতে বনগাঁ পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার এক সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, আক্রমণকারী যুবকের নাম হুমায়ূন কবীর। তার ৩৫ বছর বয়স। বাড়ি বর্ধমানের মেমারি এলাকায়। ওই ব্যক্তি তার বাবা (হাজী মুস্তাফিজুর রহমান) ও মা (মমতাজ বেগম) কে খুন করে মসজিদে হামলা চালায়। এই হুমায়ন চার জনকে ছুরির আঘাতে আহত করেছে। আহত ব্যক্তিরা হলেন গাফফার আলী মন্ডল, মেহের উদ্দিন মন্ডল এবং সফিয়ার মন্ডল হাসানুর মোল্লা।
তাদের সবাইকে স্থানীয় বনগাঁ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে স্থানীয় মসজিদ থেকে কয়েকশো মানুষ থানায় এসে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে এবং থানায় ভাঙচুর চালায়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২৯ মে প্রধান অভিযুক্ত হুমায়ূন কবীর এবং থানায় হামলা চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ১০ জনকেই বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।