যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে শুল্ক হ্রাসের চুক্তির খবরে বাজার ঘুরে দাঁড়ালেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে চীনের ব্যবসায়ীদের মধ্যে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তির পর বিজয়ের ঘোষণা দিলেও বাস্তব পরিস্থিতি এখনও স্পষ্ট নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এপ্রিল মাসে পরস্পরের ওপর আরোপিত শুল্ক কমাতে সম্মত হয় উভয় দেশ। পরে একটি সাময়িক চুক্তির আওতায় চীনের ওপর আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে আনে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে চীন।

 

স্থানীয় সময় বুধবার (১৪ মে) থেকে এই চুক্তি কার্যকর হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষে জেনেভায় এই শুল্ক হ্রাসের ঘোষণাকালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা বাণিজ্য চাই।

এ চুক্তির খবরে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন চীনের ব্যবসায়ীরা। চীনের দক্ষিণাঞ্চলের গুয়াংডং প্রদেশের রান্নার সামগ্রী উৎপাদনকারী কারখানার মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় কাজ শুরু করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

 

ওই কারখানার কর্মকতারা জানান, মঙ্গলবার (১৩ মে) তারা মার্কিন ক্রেতাদের অন্তত চারটি স্থগিতাদেশে থাকা অর্ডার পুনরায় উৎপাদনে এনেছেন।

গুয়াংডং প্রদেশের ওই কারখানার বিক্রয় প্রতিনিধি মার্গারেট ঝুয়াং বলেন, আমরা ভেবেছিলাম আলোচনার ফলে কিছুটা শুল্ক হ্রাস পাবে, কিন্তু এতটা কমবে তা আশা করিনি।

একই ধরনের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইয়াংজিয়াং হংনান ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেড কোম্পানির সেলস ম্যানেজার কাহলি ইউ জানান, তিনি আবারও মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

 

তিনি বলেন, আমরা দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কিছুটা আশাবাদী। তবে শুল্কনীতি আবার পরিবর্তিত হতে পারে। এতে আমাদের মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো অর্ডার নাও আসতে পারে। যদিও তারা আপাতত খুশি তবে এপ্রিলে ঘোষিত শুল্কের কারণে এরইমধ্যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। আগের তুলনায় কম অর্ডার পাচ্ছেন তারা। এই অনিশ্চয়তা নতুন বিনিয়োগের ইচ্ছাও কমিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।

গুয়াংডং প্রদেশের ডংগুয়ানে কার্বন ফাইবার অটো পার্টস উৎপাদনকারী অ্যাকশন কম্পোজিটসের সেলস ডিরেক্টর কেলভিন লিয়াও জানান, তিনি মূলত একটি জমি কিনে নতুন কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু শুল্ক পরিস্থিতির কারণে এখন ভাড়ায় কারখানা নিয়ে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হওয়া ভালো। কিন্তু মানুষ এরই মধ্যে ট্রাম্পের ওপর আস্থা হারিয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস, এই চুক্তি কেবলমাত্র একটি বিরতি, যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হলো চীনের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করা।

 

তবে সব শিল্প খাত এই চুক্তির আওতায় আসেনি। হংকংয়ের অ্যালুমিনিয়াম-কোটিং কারখানার মালিক ড্যানি লাউ জানান, তার কোম্পানি এখনো প্রায় ৭৫ শতাংশ শুল্কের মুখে রয়েছে, যেগুলো ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন ধাপে আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও চুক্তির খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে তার মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করবেন বলে জানান তিনি।