ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের তিন বাসিন্দা। তাদের একজনের বাড়ি কলকাতার টালিগঞ্জে, একজনের সখের বাজারে এবং আরেকজন পুরুলিয়ার বাসিন্দা।
জানা যায়, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন কলকাতার টালিগঞ্জের পাটুলির বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা বিতান অধিকারী। পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল বিতান অধিকারী ও তার স্ত্রী এবং বছর তিনেকের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কাশ্মীরে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। আগামী ২৪ এপ্রিল তাদের কলকাতায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার পহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় নৃশংস হামলায় মৃত্যু হয় তার।
এই খবরে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে অধিকারী পরিবারের। বিতানের এক আত্মীয় জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুরেও ছেলে ও বৌমার সঙ্গে কথা হয়েছে। সবাই আনন্দে ছুটি কাটাচ্ছিল। সন্ধ্যায় খবর আসে, সন্ত্রাসীদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে বিতানের।
অন্যদিকে, কলকাতার সখের বাজারের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী সমীর গুহ পরিবার নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সমীর তার স্ত্রীকে নিয়ে যখন অনন্তনাগে পহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় ছিলেন, তখন তাকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
সমিরের স্ত্রী জানিয়েছেন, আচমকা কয়েকজন ব্যক্তি ঘিরে ধরে আমাদের। সবার মুখে মাস্ক ছিল। এসেই আমাদের বলে, মাটিতে শুয়ে পড়তে। সবার হাতে বন্দুক ছিল। ভয়ে আমরা শুয়ে পড়ি। তখন বেছে বেছে আমার স্বামী এবং অন্য একজনকে গুলি করে তারা।
পহেলগাামে গুলিতে নিহত আরেকজন হলেন পুরুলিয়া ঝালদার বাসিন্দা মনীশরঞ্জন মিশ্র। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোতে (আইবি) কাজ করতেন তিনি।
পরিবার নিয়ে বৈষ্ণদেবীর উদ্দেশ্যে পহেলগাঁওয়ের গিয়েছিলেন। সেখানেই পরিবারের সামনে মনীশকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর নির্দেশে মঙ্গলবার রাতেই বিতানের বাড়িতে পৌঁছান রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি নিজে মৃতের স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। বিতানের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। মৃতের স্ত্রী-পুত্রকে কলকাতার ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।
এই ঘটনার পর গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, কাশ্মীরের পহেলগামে নৃশংস জঙ্গি হামলায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। দোষীরা কেউ যেন রেহাই না পায়। দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।