জার্মান ভোটারদের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৮ শতাংশ ভোটারই মনে করেন যে তাদের দেশে আসন্ন নির্বাচনে বিদেশি কোনো শক্তি বা সরকার হস্তক্ষেপের চেষ্টা করতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক জনগণের বিপ্লব তত্ত্ব প্রচার করছেন এবং একইসঙ্গে পশ্চিমা নির্বাচনগুলোতে অতি-ডানপন্থি প্রার্থীদের প্রকাশ্যেই সমর্থন করছেন।
তারা রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি চীনকেও হুমকি মনে করেন।
ব্রাসেলসভিত্তিক ডিজিটাল শিল্প সমিতি বিটকম পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে যে অনেক জার্মানই তাদের নির্বাচনে বিদেশি শক্তির নাক গলানোর আশঙ্কা করছেন। জার্মানিতে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এক হাজারের বেশি ভোটার এই জরিপে অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে বিদেশি কোনো শক্তি, সরকার, গোষ্ঠী বা প্রভাবশালী ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জার্মানির নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে পারে।
এ ধরনের কর্মকান্ডে যারা জড়িত হতে পারে তাদের মধ্যে রাশিয়ার সম্ভাবনা ৪৫ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ৪২ শতাংশ, চীনের ২৬ শতাংশ বলে মনে করছেন জরিপে অংশ নেওয়া ভোটাররা। পূর্ব ইউরোপের কোনো শক্তিও এধরনের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতে পারে বলে মনে করেন ৮ শতাংশ ভোটার।
এই ভোটাররা নিজস্ব রাজনৈতিক মতামত তৈরি করতে তথ্য কোথায় কোথায় থেকে নেন সেটাও জানিয়েছেন। জরিপে অংশ নেওয়াদের ৮২ শতাংশ বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে আলাপ থেকে, ৭৬ শতাংশ টেলিভিশন থেকে এবং ৬৯ শতাংশ ইন্টারনেট থেকে তথ্য পান বলে জানিয়েছেন।
৮০ শতাংশ মনে করেন, আগামী সরকারের উচিত হবে ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অপ তথ্য রোধে ডিজিটাল নীতি তৈরির দিকে মনোযোগী হওয়া।
বিটকমের প্রেসিডেন্ট রাল্ফ ভিন্টারগেয়ার্স্ট জরিপের একটি দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। ৭১ শতাংশ মানুষ মনে করেন অনলাইনে অপ তথ্য রোধে নতুন এক মন্ত্রণালয় তৈরি করা দরকার।
তিনি বলেন, নতুন ডিজিটাল মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় সব অধিকার এবং সম্পদ দিয়ে সাজাতে হবে। এটির নিজস্ব বাজেট ও নতুন আইন এবং প্রকল্প নেওয়ার ডিজিটাল শর্ত থাকতে হবে।
জরিপে অংশ নেওয়াদের এক তৃতীয়াংশ জানিয়েছেন, যে তারা ইন্টারনেটকে তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন এবং সেখানে এরই মধ্যে অপতথ্য পেয়েছেন।
ভোটারদের একটি বড় অংশই ইন্টারনেটে ডিপফেক নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ এভাবে তৈরি ভুয়া ভিডিও, ছবি বা অডিও সহজে সনাক্ত করা যায় না। ৫৬ শতাংশের মতো ভোটারের ধারণা এ ধরনের ডিপফেকের বিরুদ্ধে লড়তে জার্মান গণতন্ত্র এখনো প্রস্তুত হয়নি।
বিটকমের ভিন্টারগেয়ার্স্ট বলেন, অপ তথ্যের বিষয়ে ভোটারের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে লড়ার পথে এটা এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জার্মানির জাতীয় নির্বাচনে অপতথ্য নাটকীয় প্রভাব বিস্তার করতে পারে কারণ এটা জনমত বদলে দিতে পারে ও বিভিন্ন প্রার্থী বা দলের মানহানি করতে পারে৷।
মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক এরই মধ্যে তার সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এক্স ব্যবহার করে জার্মান রাজনীতিবিদদেরকে নির্লজ্জভাবে অপমান করছেন এবং দেশটির উগ্রডানপন্থি দল এএফডির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
বিটকমের জরিপে অংশ নেওয়া ভোটারদের ৬৬ শতাংশ এএফডির আগ্রাসী সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারণা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা এসবে প্রভাবিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে জরিপে অংশ নেওয়া ৮৭ শতাংশের মতামত হচ্ছে অনলাইনে উগ্র ডানপন্থা মোকাবিলায় সমাজকে আরেও এগিয়ে আসতে হবে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে