জন্মহার অনেক কমে যাওয়ায় এবং পারিবারিক মূল্যবোধ ধরে রাখতে ২০২৫ সালকে ‘পরিবারবর্ষ’ ঘোষণা করেছে তুরস্ক। পরিবারবর্ষকে ঘিরে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বলেছেন, বর্তমান জন্মহারের কারণে তুরস্কের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।

২০২৩ সালে দেশটিতে জন্মহার ছিল ১.৫১।

অথচ তুরস্কের জনসংখ্যা যেন না কমে সে জন্য হারটি অন্তত ২.১ থাকা উচিত। ২০১৬ সাল থেকে দেশটিতে জন্মহার নিয়মিত কমছে।

 

পরিবারবর্ষকে ঘিরে তুরস্কের সরকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। বিয়ে করতে ইচ্ছুক দম্পতিদের বিনা সুদে সর্বোচ্চ চার হাজার ইউরো ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া প্রথমবার যারা মা হবেন তাদেরও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। শিশুসেবার মান বাড়ানো ও ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারির পর জন্মগ্রহণ করা শিশুদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।

 

আংকারার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেমোগ্রাফির বিশেষজ্ঞ ইসমেত কোচ বলেন, ‘প্রথম নজরে এই ধারণাগুলো বর্তমান নীতির চেয়ে ভালো বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এসব কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা এখনো স্পষ্ট করা হয়নি।

শুধু আর্থিক প্রণোদনার ওপর ভিত্তি করে একটি নীতি শুধু সাময়িকভাবে সফল হতে পারে।’ সুবিধা দেওয়ার কারণে জন্মহার বাড়লেও সেটি স্থায়ী হবে না বলেও মনে করেন তিনি।

 

এদিকে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা তুরস্কের কর্মীরা সরকারের উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। তারা সরকারের বিরুদ্ধে ‘সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ’ তৈরির অভিযোগ এনেছেন। নারী অধিকারকর্মী ও আইনজীবী সেলিন নাকিপোলু বলছেন, নতুন উদ্যোগটির লক্ষ্য হচ্ছে তুরস্কের পারিবারিক আইনকে শরিয়া ও ইসলামী আইনের ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো, যা বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষ।

তার মতে, এর ফলে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য তৈরি হবে এবং এটি ‘নারী ও শিশুর প্রতি পুরুষের সহিংসতাকে কার্পেটের নিচে চাপা দেবে।’

 

নাকিপোলু আরো বলেন, ‘তথাকথিত পরিবারবর্ষ সমাজে নারীর অধস্তন ভূমিকাকে সুসংহত করতে সাহায্য করবে এবং বেতনভোগী ও অবৈতনিক কর্মজীবী ​​নারীদের ওপর শোষণ আরো বাড়াবে।’

অন্যদিকে তুরস্কে নারী হত্যা বাড়ছে উল্লেখ করে ফেডারেশন অব উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন্স অব টার্কির প্রেসিডেন্ট চানান গুলু বলেন, ‘২০২৫ সালকে পরিবারবর্ষ ঘোষণা না করে নারী হত্যা প্রতিরোধের বছর হিসেবে ঘোষণা করা উচিত ছিল। শুধু এই ধরনের সিদ্ধান্তই নারীদের আত্মবিশ্বাসকে অনুপ্রাণিত করত।’