আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: বস্টনের মত নিউইয়র্ক এবং ফিলাডেলফিয়াতেও প্রতিদিনই তাপদাহের ভয়ংকর অবস্থার নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। ২৪ জুলাই নিউইয়র্ক এবং ফিলাডেলফিয়ায় তীব্র গরমে দু’জনের প্রাণহানী ঘটেছে। নিউইয়র্ক সিটির মেডিকেল এক্সামিনার অফিস জানায়, হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি তাপদাহের ভিকটিম হয়েছেন। 

পেনসিলভেনিয়া স্টেটের ৭৩ বছর বয়েসী একজন মারা গেছেন। জাতীয় আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, সোমবার থেকে তাপদাহের মাত্রায় কিছুটা উন্নতি ঘটবে বলে আগে আভাস দেয়া হলেও পরিস্থিতি আরো কয়েকদিন অপরিবর্তিত থাকবে বলে সোমবার ভোররাতে উল্লেখ করা হয়েছে। রবিবার ৮৫ মিলিয়ন তথা ৮ কোটি ৫০ লাখ আমেরিকান অসহনীয় তাপমাত্রার আবহাওয়ায় ছিলেন। মঙ্গলবার নাগাদ বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও তাপমাত্রায় কমতি পরিলক্ষিত হবে বলে মনে করছে না আবহাওয়া দফতর। 

রবিবার সন্ধ্যায় বস্টনে তাপমাত্রা ছিল ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ১৯৩৩ সালে রেকর্ড ছিল ৯৮ ডিগ্রির, সেটি ভেঙ্গে গেছে। পার্শ্ববর্তী রোড আইল্যান্ড স্টেটেও প্রতিদিনই তাপদাহের অতীত রেকর্ড ভাঙছে। সেখানে রবিবার অপরাহ্নে ৯৬ ডিগ্রি উঠেছিল। নিউইয়র্ক সিটিতে ২০১০ সালে নয়া রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল ৯৫ ডিগ্রি। রবিবার সন্ধ্যায় তা ৯৭ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। ১১ বছর আগে ফিলাডেলফিয়ার রেকর্ড ছিল ৯৮ ডিগ্রি, রবিবার তা ৯৯ ডিগ্রিতে উঠে। 

 

স্টেট এবং সিটি প্রশাসন সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বিদ্যুতের সাশ্রয়ের জন্যে। অর্থাৎ অত্যধিক গরমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আগেই সকলে যদি মিতব্যয়ী হয় তাহলে ভয়ংকর কোনো অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে না। যাদের বাসায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র নেই বা যারা হোমলেস, তাদেরকে নিকটবর্তী সিনিয়র সিটিজেন সেন্টারে আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। 

গত কদিন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে টেক্সাস, আরিজোনা, ওহাইয়ো, ওকলাহোমা, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা প্রভৃতি স্টেটে তাপদাহ বিরাজ করছিল। সেই অসহনীয় তাপদাহের বিস্তার ঘটেছে নিউইয়র্ক অঞ্চলেও। ফলে সর্বত্র একটি ভীতিকর অবস্থা তৈরী হয়েছে। চলতি পথে লোকজনের আনাগোনা কমেছে। করোনায় লকডাউনের মত পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে অনেক স্থানে। অর্থাৎ অর্ধশত বছরের মধ্যে এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি আর দেখা না দেয়ায় সকলেই এই তাপপ্রবাহকেও অভিশাপ ভাবছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সোমবার ভোর রাত নাগাদ ২৮ স্টেটের ১০ কোটির অধিক মানুষ অসহনীয় তাপদাহে নিপতিত হয়েছেন। বেশ কটি স্টেটে বিশেষ জরুরী অবস্থার কথা ভাবছেন গভর্ণররা। হোয়াইট হাউজও গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে সামগ্রিক পরিস্থিতি। 

পরিবেশ নিয়ে কর্মরতরা অভিযোগ করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কালক্ষেপণের খেসারত দিতে হচ্ছে সমগ্র জনগোষ্ঠিকে। পরিবেশ সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে প্রকৃতির বৈরী পরিস্থিতি থেকে মানবতাকে সুরক্ষা দেয়া সম্ভব হবে বলে পরিবেশ-বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন।