জার্মানিতে কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ রাষ্ট্রীয় সফর ছিল ২০০০ সালে, জ্যাক শিরাকের সময়। দুই দেশের মধ্যে অনেক আগে এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তবে দীর্ঘ বিরতির কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই। দুই দেশের সরকারপ্রধান ও মন্ত্রীরা কয়েক মাস অন্তর নিয়মিত বৈঠক করেন।
রাষ্ট্রীয় সফরের সময় রাজনীতি নয় বরং দেশের জনগণের সঙ্গে দেখা করাই ফরাসি প্রেসিডেন্টের মূল লক্ষ্য। এই সফরের মূল ‘হোস্ট’ চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ নন, প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার।
ইমানুয়েল ও ব্রিজিত ম্যাখোঁর গত বছরের জুলাইয়ে জার্মানিতে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ফ্রান্সে অস্থিরতার কারণে প্রেসিডেন্ট তা বাতিল করেন।
ফেব্রুয়ারিতে ইউরোব্যারোমিটারের জন্য একটি জরিপ ফরাসিদের মধ্যে ইইউ নিয়ে হতাশার কথা বলেছে।
ম্যাখোঁ : ‘ইউরোপের মৃত্যু হতে পারে’
ম্যাখোঁ এক মাস আগে প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউরোপের জন্য আরো সার্বভৌমত্ব ও সাধারণ প্রতিরক্ষা জোরদারের আহ্বান জানান।
এবার ওলাফ শোলজ এক্সে ইউরোপের হয়ে বক্তৃতার ‘ভালো দিকগুলোর’ প্রশংসা করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
লুডভিগসবুর্গের ফ্রাংকো-জার্মান ইনস্টিটিউটের পরিচালক মার্ক রিঙ্গেলের মতে, এটা ভিন্ন মানসিকতার ব্যাপার। তিনি বলেন, ‘ভিশনস’ হলো ‘এমন বিষয়গুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করার ফরাসি উপায়, যা আপনি জার্মান ভাষায় খুঁজে পাবেন না। হেলমুট শ্মিডট একবার বলেছিলেন, ‘যদি আপনার দৃষ্টি থাকে, তবু ডাক্তারের কাছে যান। জার্মানরা ভদ্রভাবে বোঝাতে এমনভাবে বলেন।’
জোটের প্রতি জার্মান আনুগত্য, ফরাসি স্বায়ত্তশাসন
বর্তমানে অনেক বিষয়ে দুই দেশের স্পষ্ট রাজনৈতিক পার্থক্য রয়েছে। একদিকে প্যারিস যেমন পারমাণবিক শক্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অন্যদিকে বার্লিন দেশের শেষ পারমাণবিক চুল্লিটিও বন্ধ করে দিয়েছে। ম্যাখোঁও শোলজের ইউক্রেন যুদ্ধের বাহিনী নিয়েও মতপার্থক্য ছিল। ফ্রাংকো-জার্মান ট্যাংক ও যুদ্ধবিমানের পরিকল্পনা ধীরগতিতে এগোচ্ছে। ম্যাখোঁ চান, জার্মানি তার অস্ত্র পরিকল্পনার জন্য ইউরোপীয়, অন্তত ফরাসি কম্পানিগুলোকে বলুক। অন্যদিকে জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কিনতে পেরেই খুশি।
রিঙ্গেল বলেন, ‘প্রতিরক্ষা সব সময় জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে বিতর্কিত বিষয়। কারণ আমাদের আলাদা নিরাপত্তা সংস্কৃতি রয়েছে। জার্মানি ন্যাটোর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। অন্যদিকে ফ্রান্স নিজের জন্য কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন দাবি করে।’
ফ্রান্স-জার্মানির পরিস্থিতি
ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট (সিডিইউ) নেতা ফ্রিডরিখ মেয়ার্ৎস সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন ফ্রান্স-জার্মানি সম্পর্কের আরো অবনতি হয়েছে। মেয়ার্ৎস ইউক্রেনের সমর্থনের ইস্যুতে শোলজ ও ম্যাখোঁর মধ্যে ‘ফাটলের’ কথাও বলেছিলেন।
যা হোক দুই নেতাই অন্তত বহির্বিশ্বকে দেখাতে চান, তারা একে অপরকে বোঝেন। এক্সে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তারা একে অপরের ভাষায় কথা বলেছেন। ম্যাখোঁ একজন নাগরিকের একটি প্রশ্ন পড়ে শোনান। ওই নাগরিক জানতে চেয়েছিলেন ফ্রান্স-জার্মানি অংশীদারি এখনো গুরুত্বপূর্ণ কি না। শোলজ ফরাসি ভাষায় এর উত্তর দেন, ‘আমি নিশ্চিত করছি, ফ্রান্স-জার্মান বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী!’ যার জবাবে ম্যাখোঁ জার্মান ভাষায় জবাব দিয়ে বলেন, ‘আপনাকে ধন্যবাদ, ওলাফ, আমি আপনার সঙ্গে একমত।’
তারুণ্য বিনিময়
রিঙ্গেল মার্চ মাসে ইনফ্রাটেস্ট পরিচালিত সমীক্ষার উদ্ধৃতি দেন। তিনি জানান, ‘সমীক্ষা বলছে কূটনৈতিক অংশীদার হিসেবে ফ্রান্সের প্রতি জার্মানদের সমর্থন অনেক বেশি। ৮০ শতাংশেরও বেশি জার্মান মনে করে, ফ্রান্স একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার। অন্য অংশীদারদের তুলনায় ফ্রান্সকে অনেক বেশি সমর্থন করি। ফ্রান্সেও এর প্রতিফলন হয়েছে।’