মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার গাজা যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের অস্থিরতার বিষয়ে তার নীরবতা ভেঙেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকানদের বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার আছে, কিন্তু সহিংসতা প্রকাশ করার অধিকার নেই।’ ক্যাম্পাসের অস্থিরতার চিত্র দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় বাইডেন তার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হয়ে পড়েছেন।
বাইডেন বলেন, ‘সম্পত্তি ধ্বংস করা কোনো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নয়। এটা আইনের পরিপন্থী।
বাইডেন আরো বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃত্ববাদী জাতি নয় যে সমালোচকদের চুপ করিয়ে দেবে। তবে শৃঙ্খলা অবশ্যই প্রাধান্য পাবে এখানে।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য ভিন্নমত অপরিহার্য, কিন্তু ভিন্নমত কখনোই বিশৃঙ্খলা বা অন্যের অধিকার নষ্ট করতে পারে না।
বাইডেনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের প্রয়োজনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ন্যাশনাল গার্ড সেনাদের ডাকা উচিত কি না?’ উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘না।’ একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বিক্ষোভ মধ্যপ্রাচ্যে তার নীতি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেনি।’
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দমনে গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় (ইউসিএলএ) অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। দাঙ্গা দমনে ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সামনে মানবদেয়াল তৈরি করেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের বাইরে জড়ো হয়ে স্লোগান দেওয়া আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আলোর ঝলকানিযুক্ত বিকট বিস্ফোরণ (ফ্ল্যাশব্যাং) ঘটায় পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়েছে বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।
ছাত্র বিক্ষোভকারীরা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও কম্পানিকে বয়কটের দাবিতে কিছুদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। মঙ্গলবার কয়েকটি জায়গায় এ বিক্ষোভ সহিংস সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশি অভিযানে বিপর্যস্ত হয়েছে নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও। বিশ্ববিদ্যায়লটির সব প্রবেশপথেই এখন অবস্থান নিয়েছে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা। রাস্তায় বসানো হয়েছে ব্যারিকেড। জিনিসপত্র নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছে। ক্লাস বাতিল হয়েছে। পরীক্ষা কবে হবে ঠিক নেই। গোটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি থমথমে। এরপর কী হতে চলেছে তা নিয়ে বিরাজ করছে অনিশ্চয়তা। মঙ্গলবার গাজা যুদ্ধ বিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিলটন হলে অভিযান চালিয়ে পুলিশের ১০০’র বেশি মানুষ আটকের ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাসই এখন বিপর্যস্ত।
এদিকে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসে (ইউসিএলএ) মঙ্গলবার রাতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েল সমর্থকদের একটি দল। দুই পক্ষে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। ইসরায়েল সমর্থকরা ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠি নিয়ে চড়াও হয়।
শুধু কলাম্বিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া নয়, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকো, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে, ইয়েল, হার্ভার্ড, প্রিন্সটন ও মিনেসোটা ইউনিভার্সিটিতেও ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ হচ্ছে।