আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: সম্প্রতি ব্রহ্মাণ্ডের প্রায় আদি মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে মানুষ। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের এই ছবি তোলার মুহূর্ত নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক। একইরকম ভাবে মানবসভ্যতা একটি মাইলস্টোন স্পর্শ করে, যেদিন প্রথম চাঁদে পা রেখেছে। তবে তার আগে এক অদ্ভুত কাণ্ড করেন মহাকাশচারীরা। প্রায় শতাধিক স্বাক্ষর, আমরা যাকে অটোগ্রাফ বলি, তাই-ই করে রেখে যান তারা।
‘one small step for man, one giant leap for mankind’ – চাঁদের মাটিতে পা রাখার ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে এইভাবেই ব্যাখ্যা করেন নীল আর্মস্ট্রং। পরে অবশ্য তার এই মন্তব্য নিয়ে সামান্য কাটাছেঁড়া হয়। আর্মস্ট্রং বলেন, তিনি আসলে বলেছেন, ‘one small step for a man…’, যদিও তিনি নাকি নিজেই শুনে বুঝতে পারেননি ‘MAN’ শব্দের আগে ‘a’ ছিল কি-না। পরবর্তীতে কম্পিউটরের সাহায্য নিয়ে ওই ‘a’-র অস্তিত্ব কেউ কেউ খুঁজে পান তার বক্তব্যে। কিন্তু সে-কথা থাক। মুহূর্তটি সত্যি যে মানব ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত তা নিয়ে তো বিতর্কের কোনও অবকাশই নেই। আর এই অভিযানের আগে নীল আর্মস্ট্রং-সহ সকল মহাকাশচারীরা এমন একটা কাজ করেছিলেন, যা বেশ অদ্ভুত। শতাধিক সাক্ষর বা অটোগ্রাফ রেডি করে রাখেন তারা। কারণটা অবশ্য মর্মস্পর্শী-ই।
তারা এমন একটি অভিযানে অংশ নিচ্ছিলেন, যা এর আগে কখনও হয়নি। মানব-ইতিহাসে সে-এক দুঃসাহসিক অভিযান। এ-অভিযানের গুরুত্ব যতখানি ছিল, ততখানিই ছিল ঝুঁকি। অর্থাৎ এ অভিযান ছিল একই সঙ্গে রোমাঞ্চকর এবং বিপজ্জনক। জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য জ্ঞান করে আর্মস্ট্রং-সহ অন্যান্য মহাকাশচারীরা সে অভিযানে শামিল তো হলেন। কিন্তু তাদেরও রয়েছে পরিবার, পরিজন। এই অভিযান থেকে তাদের না-ফেরার সম্ভাবনাও আছে। সেক্ষেত্রে পরিবারে কী গতি হবে?
এইরকম ভাবনা থেকেই মানুষ বিমা করান। যাতে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু হলেও, পরিজনরা একেবারে অকূলপাথারে না পড়েন। কিন্তু এমন বিমা ছিল না, যা চন্দ্রাভিযাত্রীদের এহেন নিশ্চয়তা দিতে পারে। ভেবেচিন্তে তারা একটি উপায় বের করেন। ততদিনে আর্মস্ট্রং ও অন্যান্যদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে যথেষ্টই।
তারা ভাবলেন, যদি অভিযান থেকে তারা আর ফিরে আর না-ও আসেন, এ পৃথিবীতে তাদের খ্যাতি নিশ্চিতই আরও ছড়িয়ে পড়বে। মানুষ তাদের অটোগ্রাফ চাইবেন। কিন্তু পাবেন কী করে? অতএব পরিকল্পনা হল আগাম অটোগ্রাফ রেডি করে রাখা হবে। মহাকাশ অভিযানের মাস কয়েক আগে তাদের নিভৃতবাসে চলে যেতে হয়েছিল। সেই সময়ই প্রত্যেকেই বহু সংখ্যক স্বাক্ষর করে রাখেন। অর্থাৎ এই অটোগ্রাফগুলিই তাদের জীবনবিমা।
কীভাবে? পরিকল্পনা ছিল, এই অটোগ্রাফগুলি পৌঁছে দেয়া হবে তাদের পরিজনদের কাছে। যদি অভিযান থেকে তারা আর না-ফেরেন, তাহলে এই স্বাক্ষরগুলি বিক্রি করে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করতে পারবেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের অনুমান ছিল, শুধু দৈনন্দিন খরচটুকু নির্বাহের অর্থ-ই নয়, অটোগ্রাফগুলি বিক্রি করে আরও বেশি কিছু-ই মিলবে।
যদিও সৌভাগ্যক্রমে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের আর প্রয়োজন হয়নি। তবে নয়ের দশকে এই স্বাক্ষরগুলিকে নিলামে তোলা হয়। তখন দেখা যায়, মহাকাশচারীদের অনুমান অভ্রান্ত ছিল। সাক্ষরগুলি বিক্রির যে দাম নিলামে উঠে, তা নেহাত কম কিছু ছিল না।