ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) আরজি জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত জাতিসংঘের এই শীর্ষ আদালতে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে গাজা গণহত্যা মামলার শুনানি। শুক্রবার এই অভিযোগের বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া শুনবেন আদালত।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় গাজা উপত্যকায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল—এমন অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য শুরুতে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে জরুরি স্থগিতাদেশ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। গণহত্যার অভিযোগের মামলা শেষ হতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। উদ্বোধনী মন্তব্যে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাস যোদ্ধাদের হামলা, ইসরায়েলের বর্তমান কর্মকাণ্ডের সাফাই হতে পারে না।
৭ অক্টোবরের হামলায় এক হাজার ১০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি মারা যায়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সামরিক ও বেসামরিক মৃ্ত্যুর আলাদা হিসাব প্রকাশ করে না। তবে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এই সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরা বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘটিত কিছু কাজ জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশনের বিরুদ্ধে গেছে এবং সেই কাজগুলোকে ৭ অক্টোবরের হামলার উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারমন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা বলেছেন, ‘কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সশস্ত্র আক্রমণ যতই গুরুতর হোক না কেন...এই কনভেনশন (গণহত্যা কনভেনশন) লঙ্ঘনের যুক্তি হিসেবে সেটা দাঁড় করানো যেতে পারে না।’
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, ইসরায়েল যে পরিমাণ বোমাবর্ষণ করেছে তা অভূতপূর্ব এবং গাজা উপত্যকাকে ইসরায়েল কার্যত বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে।
উভয় পক্ষের প্রতিবাদের মধ্যেই চলছে শুনানি।
ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ‘পুরোপুরি মেনে’ যুদ্ধ চালাচ্ছে
ইসরায়েল এই গণহত্যার অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং হামাসের পক্ষে ‘শয়তানের উকিল’ হিসেবে কাজ করার অভিযোগ তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ সব আন্তর্জাতিক আইন মেনেই পরিচালনা করা হচ্ছে। গাজা স্থায়ীভাবে দখল করা বা সেখান থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে ফেলার কোনো উদ্দেশ্য ইসরায়েলের নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমার লক্ষ্য গাজা থেকে হামাস সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা এবং আমাদের জিম্মিদের উদ্ধার করা।’
তিনি আরো বলেন, ‘আইডিএফ (ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী) বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে, কিন্তু হামাস বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সেটা বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা মামলা করার কারণটি ‘নীতিগত’ বলে বর্ণনা করেছেন। বুধবার তিনি বলেন, ‘গাজার জনগণের ওপর চলমান হত্যাকাণ্ডে আমাদের বিরোধিতা রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের আইসিজেতে যেতে বাধ্য করেছে।’
রামাফোসা বলেন, ‘একসময় আমরা ক্ষমতাহীনতা, বৈষম্য, বর্ণবাদ এবং রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সহিংসতার তিক্ত ফল আস্বাদন করেছি। ইতিহাসের সঠিক পথে আমাদের অবস্থান থাকবে।’