হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের কাছে জানতে চেয়েছেন গাজায় তাদের অভিযান কখন শেষ হবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সুলিভান। ইসরায়েলের প্রধান মিত্র হিসেবে গাজায় ক্রমবর্ধমান বেসামরিক প্রাণহানিতে নিজেরাও অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সফরের মধ্যে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গতকাল ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নাকচ করে দিয়েছেন।
ইসরায়েলি সরকারের এক বিবৃতি অনুসারে, দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গতকাল ইওয়াভ গ্যালান্ত জেক সুলিভানকে বলেছেন, হামাসকে ধ্বংস করতে ‘কয়েক মাসের বেশি সময়’ লাগবে। গ্যালান্ত তাঁকে বলেন, হামাস গাজায় যে অবকাঠামো তৈরি করেছে তা ধ্বংস করা সহজ হবে না।
হামলা, দুর্ভোগ অব্যাহত
এদিকে গাজা উপত্যকায় তীব্র লড়াই অব্যাহত রয়েছে। দক্ষিণের শহর খান ইউনিস ও রাফাহতে ইসরায়েলি বিমান গতকালও অনেকবার হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, উত্তর গাজার একটি হাসপাতালে ৭০ হামাস যোদ্ধা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে।
দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নাকচ দূতের
গত বুধবার স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত জিপি হতোভলি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘একদম না।’ তিনি আরো দাবি করেন, ‘ফিলিস্তিনিরা কখনোই ইসরায়েলের পাশে একটি রাষ্ট্র চায়নি।’ রাষ্ট্রদূত জিপি হতোভলি বলেন, ‘অসলো চুক্তির তাত্ত্বিক পরিকাঠামো গত ৭ অক্টোবরের ঘটনায় ব্যর্থ হয়ে গেছে।
ইসরায়েলে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভানের সফরের মধ্যে তিনি এ কথা বললেন, যা উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, যুক্তরাজ্য দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতি এখনো অঙ্গীকারবদ্ধ। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতার জন্য দায়ী ‘চরমপন্থী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের’ আর যুক্তরাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
সুলিভানের সফরকে ইসরায়েলের ওপর ঘনিষ্ঠতম মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের চাপের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। জেরুজালেম সফরের প্রাক্কালে সুলিভান ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, যুদ্ধ শেষ করার একটি সময়সূচি জানতে ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন। সেই সঙ্গে বতর্মানে যে তীব্র মাত্রার অভিযান ইসরায়েল চালাচ্ছে, সেটি ভিন্নভাবে পরিচালনা করার আহ্বান জানাবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রথম থেকে গাজা অভিযানে ইসরায়েলকে সমর্থন করে এলেও তিনিও শেষ পর্যন্ত গাজায় নির্বিচার হামলার কড়া সমালোচনা করেছেন। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় গতকাল পর্যন্ত সাড়ে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
পশ্চিম তীরেও অভিযান অব্যাহত
অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি অভিযান গতকাল তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত ছিল। এদিন সেখানে শিশুসহ ১১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা দাবি করেছে, তারা জেনিনে বেশ কিছু অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির পরীক্ষাগার ও সুড়ঙ্গ খুঁজে পেয়েছে।
ইউরোপে হামাসবিরোধী অভিযান
জার্মান ও ডেনিশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা একটি পরিকল্পিত বড় হামলা বানচাল করেছে। সম্ভবত কোনো ইহুদি প্রতিষ্ঠান ওই হামলার লক্ষ্য ছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল জার্মানি ও ডেনমার্কে তিনজন এবং নেদারল্যান্ডসে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন বলেছেন, হুমকিটি যথেষ্ট গুরুতর। জার্মান প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারদের চারজন সন্দেহভাজন হামাস সদস্য।