আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: এবার লুহানস্ক তথা দনবাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লিসিচানস্কের দখল নেয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। রুশ সেনা এবং রুশপন্থিদের আক্রমণে কয়েকদিনের মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসের লুহানস্ক প্রদেশে ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ শহর লিসিচানস্কেরও পতন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা ওলেকসি আরেস্তোভিচ। রোববার (৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
অন্যদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, রুশ বাহিনী পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিসিচানস্ক দখলের কথা জানালেও ইউক্রেনীয় বাহিনীর দাবি, এই শহরটির নিয়ন্ত্রণ তারা এখনও ধরে রেখেছে। ইউক্রেন বলছে, তাদের বাহিনী সেখানে তীব্র রুশ গোলাবর্ষণের মধ্যে আছে। তবে বেশ জোর দিয়েই দেশটি বলছে, লিসিচানস্ক শহরটি দখল করা হয়নি।
অন্যদিকে. রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলছে তারা সফলভাবে শহরে প্রবেশ করেছে এবং কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। রুশ গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, শহরের কেন্দ্রে বিচ্ছিন্নতাবাদী অথবা রাশিয়ান সেনারা কুচকাওয়াজ করছে। রাশিয়ার বিভিন্ন সূত্র থেকে টুইটারে প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা যায়, শহরটির ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রশাসনিক ভবনে রুশ পতাকা উড়ছে। তবে তা নিরপেক্ষ কোনো সূত্র দ্বারা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
লিসিচানস্ক শহরটি ছিল লুহানস্ক অঞ্চলের ইউক্রেনীয়-নিয়ন্ত্রিত শেষ শহর। এই শহরটি মূলত ডনবাসের শিল্পাঞ্চলীয় এলাকার অংশ। এর আগে রাশিয়া গত মাসে নিকটবর্তী শহর সেভেরোদোনেতস্ক দখল করে। লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি হাইদা বলেছেন, রুশ বাহিনী চারদিক থেকে অবরুদ্ধ শহরটির দিকে এগিয়ে আসার কারণে লিসিচানস্কে হামলায় আর কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।
মস্কোপন্থি লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের রুশ রাষ্ট্রদূত রডিয়ন মিরোশনিক রাশিয়ান টেলিভিশনকে বলেছেন, লিসিচানস্ককে ‘নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে’ কিন্তু ‘এখনও মুক্ত করা হয়নি’। এছাড়া প্রতিরক্ষা বিষয়ক ব্লগার রব লি লিসিচানস্ক শহরের ভেতরে চেচেন রাশিয়ান সৈন্যদের অবস্থানের ছবি শেয়ার করেছেন।
রয়টার্স বলছে, রুশ মিডিয়া লিসিচানস্কের রাস্তায় লুহানস্ক মিলিশিয়ার সদস্যদের কুচকাওয়াজের ভিডিও সামনে এনেছে। এসব ভিডিওতে তাদেরকে পতাকা নেড়ে উল্লাস করতে দেখা যায়। কিন্তু ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ডের মুখপাত্র রুসলান মুজিচুক ইউক্রেনীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, শহরটি এখনও ইউক্রেনের হাতে রয়েছে। তার দাবি, ‘এখন লিসিচানস্কের কাছে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চলছে, তবে ভাগ্যক্রমে, শহরটি এখনও অবরুদ্ধ নয় এবং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।’
রয়টার্স অবশ্য তার এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। অন্যদিকে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা ওলেক্সি আরেস্টোভিচ বলেছেন, রাশিয়ান বাহিনী অবশেষে সিভারস্কি দোনেৎস নদী অতিক্রম করেছে এবং উত্তর দিক থেকে শহরের দিকে আসছে।
তিনি জানান, ‘এটি আসলেই একটি হুমকি। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। আমি এখানে সম্ভাব্য কয়েকটি ফলাফলের একটিকেও বাতিল করছি না। দু-এক দিনের মধ্যে বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ আরেস্টোভিচ বলেন, যাইহোক লিসিচানস্ক শহরের দখল নেয়া রুশদের জন্য কৌশলগতভাবে বিষয়গুলোকে জটিল করে তুলবে। কারণ এখন থেকে তাদেরকে শিল্পোন্নত পূর্ব দনবাস অঞ্চলের ছয়টি প্রধান শহরের ওপর ফোকাস করতে হবে। তাদের বাহিনীকে আরও পাতলা করে ছড়িয়ে দিতে হবে। পশ্চিমা অস্ত্র যত বেশি সামনে আসবে, ইউক্রেনের পক্ষের দৃশ্য তত বেশি বদলে যাবে।