বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে গণতান্ত্রিক চর্চা আগে সেভাবে ছিল না। দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্রীড়া সংগঠন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন নিয়মিতভাবে বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন করত না। কাজী সালাউদ্দিনের চতুর্থ মেয়াদে অবশ্য ব্যতিক্রম হচ্ছে। দুই বছর মেয়াদে এবার দুই বার এজিএম আয়োজন করেছে সংস্থাটি।

আজ রাজধানীর এক পাঁচ তারকা হোটেলে বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিগত সভায় বিভিন্ন ক্লাব এবং জেলার প্রতিনিধিরা হট্টগোল করলেও এখন অবশ্য প্রতিবাদ তেমন হয় না। যেমন আজ সব কিছুতেই আগেভাগে পাশ পাশ বলে শেষ করা হয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই সংবাদ সম্মেলেনেরও ইতি ঘটেছে!

গত অর্থ বছরে বাফুফে খরচ করেছে ৩৩ কোটি ৭৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৭ টাকা। ব্যয়ের বিপরীতে আয় ছিল ২৮ কোটি ৮০ লাখ ৮ হাজার ২৯৩ টাকা। গত বছর ঘাটতি ছিল ৫ কোটি সেখানে আগামী অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির সংখ্যা আরো দুই কোটি বেশি। ২০২৩ সালের প্রস্তাবিত বাজেট ৪৯ কোটি ৩৪ লাখ। এর বিপরীতে আয় ৪১ কোটি ৯৫ লাখ।

এই ঘাটতি বাজেট বাফুফে সংস্থান করবে কিভাবে এ নিয়ে কোনো প্রতিনিধি জানতে চায়নি। ঘাটতি বাজেট প্রসঙ্গে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘কেউ প্রশ্ন তোলেনি, তারা আমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে, আমাদেরই দায়িত্ব এটা জোগাড় করা। যেহেতু আমরাই অর্থ জোগাড় করি, এ কারণে কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেনি। আশা করি, এই ঘাটতি আমরা পুষিয়ে নিতে পারব।’

গত এক বছরে ফুটবলে অনেক কিছুই ঘটেছে। ফেডারেশনের কর্মকান্ডেও ছিল কিছু অসঙ্গতি ও অপূর্ণতা। এসব বিষয় নিয়ে তেমন কেউ কথা বলেননি। বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য রেখেছেন চার জন। এদের মধ্যে শরিয়তপুর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মোজাম্মেল হক চঞ্চল জেলা পর্যায়ে অনুদান বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন,‘ফিফা-এএফসি বাফুফেকে অর্থায়ন করে। এর প্রেক্ষিতে বাফুফে তার অধিভুক্ত সংস্থা ক্লাব ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনকে আর্থিক সাহায্য সেভাবে করে না।’ 

রাঙামাটির প্রতিনিধি সাইফুল ভুট্টো কিছু জেলাকে অগ্রাধিকার দেবার কথা বলেছেন, ‘অনেক জেলায় পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। কলকারখানা, শিল্পায়ন আছে ফলে সেখানে কিছুটা আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়। আমাদের রাঙামাটিতে একটি মাত্র ইন্ডাস্ট্রি আছে। ফলে আমাদের সংকট এবং সীমাবদ্ধতা বেশি। আমাদের বেশি সহায়তা প্রয়োজন।’

এজিএম শেষে বাফুফে সভাপতিকে জেলার সাহায্য প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। তিনি সেই উত্তরে বলেন, ‘অনেকে লিগ করেন না। উনারা তাকিয়ে থাকেন আমাদের দিকে, আমরা কিভাবে সাহায্য করব। এই সমস্যা এখনও সমাধান করতে পারছি না। খালি টাকা চায়। আমিও টাকা চাই, তারাও টাকা চায়। আমার কাছে যখনই টাকা এসেছে, আমি তাদেরকে দিয়েছি। এর আগে সরকারের কাছ থেকে যে টাকা এসেছিল তার ৫০ শতাংশ তাদের দিয়েছি। টাকা থাকলে তো টাকা দেব, না থাকলে কিভাবে দেব।’

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে কাউন্সিলর সংখ্যা কমানোর নির্দেশনা ছিল ফিফার। এজন্য একটি বিশেষ কমিটিও করেছিল বাফুফে। আজকের সভায় এসব নিয়ে আলোচনা না হলেও সাংবাদিকদের জিঞাসা ছিল। এ প্রসঙ্গে বাফুফে সভাপতি বলেছেন, ‘যতকিছু হোক আমাকে ফিফার ম্যান্ডেট মানতে হবে।’ 

ফিফার সঙ্গে বাফুফে এই বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। দুই পক্ষই এখনো পর্যবেক্ষণ অবস্থায় রয়েছে।