আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দেশের সব ফেডারেশনকে জাতীয় দলে প্রবাসী ক্রীড়াবিদ অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। বুধবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠি দেওয়া হয়েছে দেশের সব ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনকে।

প্রবাসী ক্রীড়াবিদের দেশের জার্সিতে খেলার ঘটনা নতুন নয়। তবে গত ২৫ মার্চ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরীর জাতীয় দলের জার্সিতে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলার পর আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তারপর থেকে আরো প্রবাসী ফুটবলার বাংলাদেশ দলে অন্তর্ভুক্তির জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে বাফুফে। কানাডা জাতীয় দলে খেলা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ফুটবলার সামিত সোম দেশের হয়ে খেলতে রাজি হয়েছেন।

 

ফুটবলে প্রবাসী ফুটবলারের আগমন ২০১৩ সালে ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়াকে দিয়ে। এর পর তারিক কাজী, কাজেম কিরমানীসহ আরো কয়েকজন সিনিয়র ও জুনিয়র দলে খেলেছেন। সর্বশেষ হামজা চৌধুরী। এরই মধ্যে বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য জ্যাক আশিকুল ইসলাম নামের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক জিমন্যাস্ট বাংলাদেশের পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন।

ইংল্যান্ড প্রবাসী অ্যাথলেট ইমরানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জিমন্যাস্ট সাইক সিজার, নিউজিল্যান্ড প্রবাসী জিমন্যাস্ট আলী কাদের, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌস, ইংল্যান্ড প্রবাসী সাঁতারু জুনাইনা আহমেদ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

 

বিভিন্ন খেলায় প্রবাসী অন্তর্ভুক্তি নিয়ে নেতিবাচক অনেক খবরও ছিল। প্রবাসী ক্রীড়াবিদ এনে অনেক ক্রীড়া সংগঠকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলেরও অভিযোগ আছে। ২০১৭ সালে আজারবাইজানের বাকুতে হওয়া ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে খেলানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নারী লংজাম্পার আলিদা শিকদারকে দলভুক্ত করেছিলেন বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব মন্টু। আলিদা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন বাকুতে প্রতিযোগিতায় অংশ না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়ে।

এত দিন কিছু ফেডারেশন নিজেদের উদ্যোগে এবং কর্মকর্তাদের পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রবাসী এনেছিল জাতীয় দলে খেলানোর জন্য। এই প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে ফেডারেশনগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করা মেধাবী ক্রীড়াবিদ জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্তির জন্য।

সরকারের এই নির্দেশে সুবিধাবাদী কিছু ক্রীড়া সংগঠক সুযোগ নিতে পারেন বলেও মনে করছেন ক্রীড়াঙ্গনের অভিজ্ঞ কেউ কেউ। এ জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের একটি নীতমালা তৈরি করে দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন ক্রীড়াবোদ্ধারা। তা নাহলে নিজেদের প্রবাসী আত্মীয়-স্বজনকে লাল-সবুজ জার্সি পরাতে উঠেপড়ে লাগবেন অনেক সংগঠক।

 

 

 

এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরির কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা? জানতে চাইলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, অতীতে এমন হয়ে থাকলে সেটা দুঃখজনক। তাহলে আমাদের যে ভালো একটা উদ্যোগ সেটা সফল হবে না। যে কারণে, এ বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে। নীতিমালার প্রসঙ্গ তুলেছেন, এটা দারুণ একটা আইডিয়া। আমরা অবশ্যই একটা নীতিমালা তৈরি করবো। একটা কমিটিও গঠন করে দেবো। যাতে চাইলেই যাকে খুশি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ না থাকে। প্রবাসী ক্রীড়াবিদদের যে নামগুলো পাওয়া যাবে তাদের যোগ্যতা খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি। তারপর সিদ্ধান্ত।