স্পোর্টস ডেস্ক: অবশেষে তীরে এসে তরী ডুবলো টাইগারদের। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-২০তে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়ের দেয়া ২০৬ রানেই চাপা পড়লো টাইগাররা। টি-২০র দৈনদশা যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পিছুই ছাড়ছে না। তা আবারো প্রমাণ হলো হারারে মাঠে। টি-২০ ফরম্যাটে বড় লক্ষ্য তাড়া করে অবশেষে ১৭ রানের হার মানতেই হলো সোহান বাহিনীকে।
শুরুটা খুব একটা ভালো করতে পারেনি টাইগাররা। মাত্র দলীয় ৮ রানের মাথায় মুনিম শাহরিয়ার ও ৬১ রানে লিটন দাসের উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে টাইগাররা।
কুড়ি ওভার ফরম্যাটে বাংলাদেশের অষ্টম অধিনায়ক হিসেবে টস করতে নেমে শুরুতে ভাগ্য সহায় হয়নি সোহানের। ফলে জিম্বাবুয়ের নেওয়া সিদ্ধান্তে আগে বল হাতে তুলে নিতে হয় বাংলাদেশ দলকে। কিন্তু টি-২০তে গতানুগতিক একই ধারাই দেখলো টাইগার দর্শকরা।
বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করতে নামেন লিটন দাস আর মুনিম শাহরিয়ার। প্রথম ওভারে তারা নেন ৫ রান। দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেন মুনিম। ওয়েলিংন মাসাকাদজার ঘূর্ণিতে শর্ট থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ দেন ৮ বলে ৪ করা মুনিম।
তারপরই দলের হয়ে হাল ধরেন লিটন দাস ও এনামুল হক বিজয়। লিটন ব্যাক্তিগত ১৮ বলে ৩২ ও বিজয় ১৬ বলে ১৩ রানে ব্যাট করছিলেন। দলীয় রান যখন ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৬১ রান ঠিত তখনই দূর্ভাগ্যজনকভাবে রিচার্ড নাগারাভার হাতে ৩২ রানে রান আউটের শিকার হন লিটন।
এরপরই দলের রান বাড়াতে হাত খুলে খেলতে থাকেন বিজয় । ৬-৪ মারতে যেয়ে আবারও বড় শট খেলতে গিয়ে সিকানদার রাজার বলে শিরটন সুমবার হাতে ধরা পড়েন বিজয়। আউট হবার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৬ রান। এরপরই আফিফ ১০ ও শান্ত ১৮ রানে ব্যাট করছিলেন। কিন্তু তাদের জুটিও বেশিদুর এগুতে পারেনি। প্রথমে আফিফ ও পরে শান্ত, দু’জনই পরপর লুক জাগুইয়ের বলে আউট হন। আউট হবার আগে শান্ত ৩৭ ও আফিফ ১০ রান করেন। দু’জনই ক্যাচ আউট হন।
তবে কুড়ি ওভার ফরম্যাটে বাংলাদেশের অষ্টম অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান দলকে শেষ আশার আলো দেখাচ্ছিলেন। মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে দলের রান সচল রাখার যথেস্ট চেষ্টা করে গেছেন তিনি। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আর পেরে উঠতে পারেননি তারা। মোসাদ্দেক ১০ বলে ১৩ রানে আউট হলে শেষ পর্যন্ত সোহান ২৬ বলে ৪২* রান করে অপরাজিত থাকেন।
টি-২০ খেলতে নামা বিজয়ই যেন এদিন দলকে ডুবিয়ে দিলেন! ২৭ বল খেলে ২৬ রান করে আউট হন তিনি। তার ওয়ানডে ঘারানার ব্যাটিংয়ে আরো চাপে পড়ে দল।
১৬ ওভারে ১৪৬ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের তখন জয়ের জন্য ২৪ বলে প্রয়োজন ৬০ রান। সে মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নিজ ব্যাটে ঝড় তুলে খানিক আশার সঞ্চার জোগান সোহান। তবে মোসাদ্দেক হোসেন আউট হলে কাজে আসেনি নতুন অধিনায়কের ২৬ বলে অপরাজিত ৪২ রানের ইনিংসটি। ১টি চার ও ৪টি ছয়ে সাজানোর সোহানের এই ইনিংস পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে শুধু।
নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৮৮ রানে। এতে ১৭ রানের জয়ে সিরিজের এগিয়ে গেল জিম্বাবুয়ে। আরো একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মিশনে নিজেদের ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে নেমে আরো একটি পরাজয়ের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ দল।
এর আগে টাইগার বোলারদের লাগামহীন বাজে বোলিংয়ে টি-২০তে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে জিম্বাবুয়ে।
হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ওয়েসলি মাধভিরে এবং সিকান্দার রাজার ঝড়ো ইনিংসে ভর করে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা।
হারারে স্পোর্টস ক্লাবে ম্যাচটি শুরু হয় বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায়। এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। ফলে যথা নিয়মে আগে ফিল্ডিং করেছে টাইগাররা।
২০০৬ সালে ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১২৮টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৪৪টি ম্যাচে জয় এবং ৮১টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। বাকি তিনটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬ ম্যাচ খেলে পাঁচটি হারের বিপরীতে টাইগারদের জয় ১০ ম্যাচে।
স্কোর:
জিম্বাবুয়ে - ২০৬/৩ , ২০ ওভার
ওয়েসলি মাধভিরে-৬৭
সেকান্দার রাজা-৬৫*
মুস্তাফিজ - ২ উইকেট
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত - ১ উইকেট
বাংলাদেশ - ১৮৮/৬ , ২০ ওভার
লিটন দাস-৩২
নুরুল হাসান সোহান-৪২*
লুক জাঙ্গুয়ে- ২ উইকেট।
ফলাফল: জিম্বাবুয়ে ১৭ রানে জয়ী।