বিনোদন ডেস্ক: বলিউড সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে কাস্টিং কাউচের শিকার হয়েছিলেন অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী হালদার। প্রকাশ্যে প্রথমবার জীবনের এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করলেন অভিনেত্রী। মিটু নিয়ে এবার সরব তিনি।
বাংলা টেলিভিশন তথা সিনেমার অন্যতম সফল অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী হালদার। পঞ্চাশের গণ্ডি পেরিয়েও দাপটের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। শুধু বাংলাতেই নয়, হিন্দি টেলিভিশনেও সফল ইন্দ্রাণী হালদার। বেশকিছু হিন্দি চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন তিনি। এবার গায়ে কাঁটা দেওয়া অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন ইন্দ্রাণী।
বর্তমান কাস্টিং কাউচ, মি টু এই শব্দগুলির সঙ্গে সকলেই পরিচিত। ২০১৮ সাল থেকে সারা বিশ্বজুড়ে শুরু হলে মিটু মুভমেন্ট মাথাচাড়া দিয়েছে। শুক্রবার (৩ জুন) এক অনুষ্ঠানে শামিল হলে ইন্দ্রাণী হালদার জানান, আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগে এক প্রযোজকের কুনজর পড়েছিল তার উপর। বরাত জোরে সেই যাত্রায় বেঁচে যান অভিনেত্রী।
অভিনেত্রী বলেন, তখন আমার ২০ বছর বয়স মুম্বাই গিয়েছিলাম একটা সিনেমা করতে, একদম জীবনের প্রথমদিকের সিনেমা। সেই সময় আমি এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই।
তিনি জানান, তাকে সকালের ফ্লাইটে মুম্বাইয়ে ডাকা হয়, অভিনেত্রীর বাবার টিকেট কাটা হয় বিকালের। কোনও দামী হোটেলে না রেখে লিঙ্কিং রোডের এক সাধারণ হোটেলের রুম দেওয়া হয়েছিল তাকে। শুরুতেই খটকা লাগে তার, এরপর প্রযোজক আচমকা ফোন করে জানান, তিনি দেখা করতে আসবেন। ঘাবড়ে গিয়েছিল অল্পবয়সী ইন্দ্রাণী। রুমে এসে মুম্বাইয়ের সেই নামী প্রযোজক সুযোগ বুঝে খারাপ প্রস্তাব দেন। রীতিমত শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন।
ইন্দ্রাণী হালদার জানান, আমি বারবার করে বলেছিলাম এটা করবেন না প্লিজ। আমি এভাবে কখনও কাজ পাইনি পেতে চাইও না।
প্রযোজক পালটা বলেছিলেন, তুম বাঙালি লড়কি তুমকো হাম বড়া হিরোইন বানাগেয়া, বড়া বড়া হিরোইন হামারে কদমোমে রহতা হ্যায়। (তুমি বাঙালি হিরোইন, তোমাকে আমি অনেক বড় অভিনেত্রী তৈরি করব বলিউডের, অনেক নামীদামী হিরোইনরা আমার পায়ের তলায় থাকে)।
দৃঢ় কণ্ঠে নায়িকা বলেন, হতে পারে বড় বড় হিরোইন আপনার পায়ের তলায়। কিন্তু আমি এভাবে কাজ করিনি, আমাকে কলকাতা থেকে ডেকে এনে কাজ দিয়েছেন কোনও সমঝোতা বা কম্প্রোমাইজ আমি করব না।
এরপর মনে মনে ঈশ্বরকে ডাকতে থাকেন ইন্দ্রাণী, আর বলেন, ভগবান, আজ কি আমি ধর্ষণের শিকার হব! প্রযোজক তখন নিজের জামা কাপড় খুলতে শুরু করেছেন, ওমনি তার ফোন বেজে উঠে। ফোনটি করেছিলেন ওই প্রযোজকের স্ত্রী। ইশারায় ইন্দ্রাণীকে চুপ করে থাকতে বলছিলেন প্রযোজক, দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেন নায়িকা।
জোরে জোরে কাশতে শুরু করেন। কাশির আওয়াজ ফোনের ওপারে পৌঁছেছিল। স্ত্রীকে নিজের সঠিক অবস্থান জানাতে একপ্রকার বাধ্যই হন প্রযোজক। এরপর হোটেল রুম থেকে চলে যান প্রযোজক, শুধু বলে যান- তুমহারা কুছ নেহি হোগা, তুম বেকার হো একদম।
তবে জোর গলায় ইন্দ্রাণী হালদার জানান, সেদিন তিনি আমার কনফিডেন্সটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমি কোনওদিন কম্প্রোমাইজ করে হিরোইন হতে ইন্ডাস্ট্রিতে আসিনি।
অভিনেত্রী বলেন, ওই প্রযোজকের নামটা নিলাম না কারণ তিনি আর বেঁচে নেই। তবে পরবর্তীকালে যখনই তার মুখোমুখি হয়েছি তিনি কোনওদিন চোখ তুলে আমার দিকে তাকাতে পারেননি।
সিনেমা বা প্রযোজকের নাম না নিলেও ইন্দ্রাণী জানান, ওই সিনেমায় তার নায়ক ছিলেন বাঙালি।