দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক অভিজ্ঞ রাজনীতিকের পাশাপাশি নানা ক্ষেত্রের একদল তারকাও বিজয়ের হাসি হেসেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ যেমন রাজনীতিতে তুলনায় একেবারে নবীন, আবার কেউ কয়েক মেয়াদের সংসদ সদস্য। তাঁদের মূল পদচারণ নাটক, চলচ্চিত্র, সংগীত ও ক্রীড়াঙ্গনে। বিজয়ের পর তাঁরা ভূমিকা রাখবেন আইন প্রণয়নেও।
এর মধ্যে বেশির ভাগ তারকা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। তবে অন্য দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচিত হয়েছেন কয়েকজন তারকা। প্রথমবারের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান। মাগুরা-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এই অলরাউন্ডার ক্রিকেটার তাঁর নিজ ভোটকেন্দ্র দরিমাগুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকালে ভোট দেওয়ার সময়ই বলেছিলেন, জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
ভোটাররাও তাঁকে নিরাশ করেননি। এক লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সাকিব। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল পেয়েছেন দুই হাজার ৮৫৫ ভোট।
চলচ্চিত্র নায়ক ফেরদৌস আহমেদও প্রথমবারের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে ঢাকা-১০ আসনে ভোটের লড়াইয়ে নামেন।
শেষ পর্যন্ত ফেরদৌসই জয়ী হয়েছেন। তাঁর পাওয়া ৬৫ হাজার ৮৯৮ ভোটের বিপরীতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কামরুল আলম পেয়েছেন ২ হাজার ২৫৭ ভোট।
শক্তিমান অভিনেতা, আবৃত্তিকার তথা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব থেকে রাজনীতিতে নামা আসাদুজ্জামান নূর পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য হচ্ছেন।
২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নূর। এরপর টানা ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এবারও আসনটি তাঁর হাতছাড়া হয়নি।
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে লড়েন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। নড়াইল-২ আসনের বিদায়ি সংসদ সদস্য তিনিই। মাশরাফি সকালে ভোট দিয়েছেন নড়াইল সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে। ভোট দেওয়ার পর মাশরাফি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করলেও বলেন, শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শেষ পর্যন্ত এক লাখ ৮৬ হাজার ৬১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ীর হাসি হেসেছেন তিনিই। হাতুড়ি প্রতীকের অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান পেয়েছেন তিন হাজার ৪১ ভোট।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহসভাপতি ও সাবেক তারকা ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী খুলনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী। সকালে রূপসা উপজেলার নৈহাটি কেন্দ্রে ভোট দেন তিনি। এ সময় সালাম মুর্শেদী বলেন, বিজয়ী হলে খুলনার মানুষের কর্মসংস্থানসহ উন্নয়নে তাঁর তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। জয়ের পথে ছিলেন গত শতকের আশির দশকে ঢাকার মাঠ কাঁপানো এই ফুটবলার।
চলচ্চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি প্রত্যাশামতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে প্রথমবারের মতো রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে নির্বাচনে লড়েন। ২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে নাম লেখান মাহি। প্রচারণায় বেশ সাড়া ফেললেও ভোটের লড়াইয়ে বড় ব্যবধানে হেরে গেছেন তিনি। এই আসনে বিজয়ী প্রার্থী নৌকা প্রতীকের ওমর ফারুক পেয়েছেন এক লাখ তিন হাজার ৫৯২ ভোট। মাহির প্রাপ্ত ভোট ৯ হাজার ৯।
পুরনো তারকাদের মধ্যে মানিকগঞ্জ-২ আসনে নৌকা নিয়ে লড়েন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম। মমতাজ জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী ছিলেন। সকাল ১০টার দিকে সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে তিনি বিজয় চিহ্ন ‘ভি’ দেখান। বেশির ভাগ তারকার মধ্যে তিনিও ছিলেন বিজয়ের পথে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী। পাবনা-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তিনি। তবে এজেন্টদের বের করে দেওয়া এবং জাল ভোটসহ নানা অভিযোগে ভোট শেষের এক ঘণ্টা আগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি।
অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন আলোচিত অনলাইন কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। গতকাল সন্ধ্যায় অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে হিরো আলম এই ঘোষণা দেন। তিনি বগুড়া-৪ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের হয়ে ডাব প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।