গত জানুয়ারিতে রাজধানীর মিরপুরের একটি শুটিংস্পটে দগ্ধ হয়েছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি তিনি। দীর্ঘ নয় মাস পার হলেও এখনো কোনো সুরাহা হয়নি আঁখির সাথে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার। ন্যায়বিচার তো পাননি এমনকি জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে পারেনি শারমিন আখিদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ।
অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘কাজের মানুষজনদের সাথে দেখা হলেই এখন ঘুরে ফিরে একটা প্রশ্ন আসছে- অভিযোগ করলাম না কেনো? অভিযোগ করলে আমি নাকি ন্যায়বিচার পেতাম। তাহলে আপনারা মেনে নিচ্ছেন অন্যায় অবশ্যই হয়েছে। শুধু বিচারটা হয় নাই।’
পোষ্ট সুত্রে জানা যায়, হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আঁখির পরিবার থেকে অভিনয় শিল্পী সংঘে অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান অভিনেত্রী।
অনেকে আঁখির কাছে জানতে চাচ্ছেন তিনি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কিনা। এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী লিখেছেন, অতি এক্সাইটেড হয়ে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী জানতে চাচ্ছে আমি ক্ষতিপূরণ চাইলাম না কেনো? সংগঠন নাকি ব্যবস্থা নিতে পারতো।
অভিনেত্রী লিখেছেন, আমি বার বার বলেছি, ক্ষতিপূরণ না অন্যায় যেটা হয়েছে তার একটা দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা তৈরী করেন। যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনার স্বীকার আর কেউ যেন না হয়। আমার ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলেন তো ক্ষতিপূরণ দিয়ে আমার এ ক্ষতি পোষাতে পারবেন কেউ? এই ক্ষমতা কি এই সমাজের আছে? আমাকে এমন লোভী বানানোর অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের?
তার অভিযোগ, ‘ঘটনার পরে একটা তো কমিটি গঠন করা হইসিলো। গিল্ড আর ইকুইটি সেই কমিটি গঠন করে দিসে। সংগঠন থেকে কমিটিকে কাজ বুঝাই দেওয়া হইসে না? কমিটি কি রিপোর্ট দিসে? কই সেইটা, দেখান? আজকে তো ৯ মাস। কোথায় সেই কমিটি? কমিটি হয়ে যাওয়ার পর কমিটির পিছনে কি আমার পরিবার সরকারি অফিসের মত বার বার গিয়ে ঘেন ঘেন করবে? নাকি সংগঠন সেই কমিটিকে ফলোআপ করবে? নিয়ম অনুযায়ী কমিটি কমিটির মত করে তার রিপোর্ট পেশ করবে। ওই কমিটিতে ইম্রাউল রাফাত, ইমেল হক, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, মাহমুদ নিয়াজ চন্দ্রদ্বীপ আপনারা নাকি ছিলেন। আর কে কে ছিলেন জানিনা। দেন, আপডেট দেন, কি করলেন এই ৯ মাসে? নাকি সংগঠন আপনাদের কোনো টাইম ফ্রেম বেধে দেয় নাই কতদিনের মধ্যে কি করবেন? কোনো মিটিং মিনিটস নাই, কার সভাপতিত্বে হইল কমিটি, কে কমিটির আহবায়ক? কে কাকে ফলোআপ করবেন? আচ্ছা মেনে নিলাম একটা ইমারজেন্সি পরিস্থিতিতে তখন গিল্ড আর ইকুইটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক-এর অনুপস্থিতিতে কমিটি করসেন, পরবর্তীতে তো ওই কমিটির একটা স্ট্রাকচার দাড় করাইতে হবে। নাকি সাংগঠনিক এই বিষয়গুলো আমি একটা অসুস্থ মানুষ আপনাদেরকে বলে দিবো। এখন যদি কমিটিকে খুঁজতে যান সেই কমিটিই তো খুঁজে পাবেন না। কে কার কাছে জবাবদিহি করবে। আর ঐ দিন হাউজ মালিককে রাহাত ফোন করে সংগঠনে নিয়ে আসেন। এরপর আপনাদের সাথে বসিয়ে দেওয়া হয় কথা বলার জন্য। ওই লোকের সামনেই তো কমিটি হইল। এরপর থেকে দেখা হইলেই অভিযোগ করেন আমার পরিবার যোগাযোগ করে নাই দেখে আপনারা কিছু করেন নাই। কি হাস্যকর। এই কথা বলে কোন দায় এড়াতে চান বুঝিনা। আমার পরিবার আপনাদের ফলোআপ করবে না ভাইয়া, গিল্ড আর ইকুইটির এক্সেকিউটিভ বডি ফলোআপ করবে। এটাই তো সাংগঠনিক নিয়ম!’
গত ৯ মাস ধরে প্রতি মাসে ৩০/৪০ হাজার টাকা যেখানে আমার চিকিৎসা খরচ, যেই ভয়ঙ্কর মানসিক দুর্যোগ এর মধ্যে দিয়ে আমার পুরো পরিবার এক একটা দিন পার করছে, যেই ট্রমার মধ্যে দিয়ে আমি আর রাহাত সব সামলে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি কিভাবে আশা করেন এতো বড় একটা দুর্ঘটনার পর খুব ক্ষতিপূরণ চাই বলে বার বার আপনাদের কাছে যাবো?
গণমাধ্যমের দিকে ইঙ্গিত করে আঁখি বলেন, আমি কোনো বিচার চাইনা। আমার অবস্থান আমি পরিষ্কার করলাম আবারো। গণমাধ্যমের অবস্থান ক্লিয়ার এক্সিডেন্টের দিন থেকে। তারা ভিউ চায়, ক্লিক বিট চায়, তারা চাইলে কলমের খোঁচায় দফা রফা করে ফেলতে পারতো। কিন্তু তারা সেটা করে নাই। তাই তাদের কাছে কোনো প্রত্যাশা নাই। সহকর্মীদের অবস্থান ক্লিয়ার, সহমর্মিতা দেখাবে, কিন্তু প্রতিবাদ করবে না। আমার চামড়ার দাম তো কম, চামড়ার বাজার মূল্য প্রতি প্রজেক্ট ৭০/৮০ হাজার হইলে দৃশ্যপটই ভিন্ন হইত। কিন্তু অভিনয় শিল্পী সংঘের আসলে অবস্থানটা কি আমি ক্লিয়ার না। কিসের ভয় নিজ উদ্যোগে হাউজ মালিককে ডেকে তার গাফিলাতির জন্য ক্ষমা চাওয়ানো। চাওয়া তো এইটুকুই। এতোটুকু করতে পারছেন না। এটা করতে কমিটি লাগে? জুজুর ভয়টা কোথায়?
উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি মিরপুরের একটি শুটিং বাড়ির মেকআপ রুমে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন শারমিন আঁখি। সেদিনই তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। বিস্ফোরণে আঁখির হাত, পা, চুলসহ শরীরের ৩৫ ভাগ পুড়ে যায়। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে প্লাজমা দিতে হয়। দীর্ঘ দুই মাস চিকিৎসা শেষে তিনি বাসায় ফেরেন। তবে বাসায় ফিরলেও তিনি এখনো কাজে ফেরেননি।